শিরোনাম
*আব্বাছ হোসেন*
লক্ষ্মীপুর, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও সাধারণ মানুষ। লক্ষ্মীপুরে প্রায় ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসা সুবিধা দিতে ২০০৩ সালে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
২০১৭ সালের ১৭ মার্চ এটিকে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ঘোষণা দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হলেও পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছেনা। অথচ ২০ বছরেও ১০০ শয্যার জনবল দেয়া হয়নি। সে ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসক,নার্স ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জনবল সংখ্যা ১৫৪জন। কর্মরত রয়েছে ১০৪জন। এখনো শুন্য পদের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ থেকে সিনিয়র কনস্যালটেন্ট গাইনি পদটি খালি রয়েছে। খালি রয়েছে সিনিয়র কনস্যালটেন্ট মেডিসিন ও ইএনটি (নাককান গলা)। এছাড়া জুনিয়র কনস্যালটেন্ট অর্থোপেডিক্র, চক্ষু, সার্জারী ও ইএনটি পদ। অপরদিকে স্টাফ নার্স ২৩জনের স্থলে কর্মরত রয়েছে ৫জন। খালি রয়েছে ১৮টি পদ। মিডওয়াইফ ৬টি পদের স্থলে ৬টি খালি রয়েছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। অফিস সহায়ক থাকার কথা ১০জন। আছে মাত্র ২জন। ৮টি পদ খালি রয়েছে বছরের পর বছর। একই অবস্থায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বেলাও। ৪জনের স্থলে রয়েছে ১জন কর্মরত। বাকী তিনজনের পদ খালি। এতো পদ খালি থাকার পরও চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হছে। গত জানুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত এ হাসপাতালের বহি: বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ১লাখ ৫১ হাজার ৯শ ৫২জন রোগী। জরুরী বিভাগে ৪৫ হাজার ৫শ ৩২জন। এছাড়া অন্ত: বিভাগে ২৮ হাজার ৪শ ১২জন ও ডায়রিয়া আক্রান্ত ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৩শ ৯৭জন নারী-পুরুষ ও শিশু। এসময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে ২শ ১৩জন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের বেডের সংখ্যা ১৫টি। অথচ এ ওয়ার্ডে শিশু ভর্তি রয়েছে ১০০জন। যেখানে প্রতি বেডে এক শিশু চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রতি বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ৩/৪শিশু। এছাড়া স্থান সংকুলন না হওয়ায় বারান্দায় ও ফ্লোরে শিশুদের ভর্তি দিতে হচ্ছে। একই অবস্থায় মেডিসিন,সার্জারী ও গাইনিসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের । এর মধ্যে জনবল সংকটের কারনে বেডের তুলনায় অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
এসময় কথা হয় রোগীর স্বজন হাসান ও ইউসুফ হোসেন বলেন, রোগীর চাপ রয়েছে। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। দ্রুত জনবল সংকট দূর করে চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করা দরকার ।
সদর হাসপাতালের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন,পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি। বেডের তুলনায় রোগী ভর্তি রয়েছে ১০গুনের বেশি। একদিকে তীব্র শীত। অন্যদিকে বেড না থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে শিশুরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের টয়লেট ও আশপাশের জায়গায় নোংরা পরিবেশ থাকায় ঠিকমত থাকা যাচ্ছেনা। দ্রুত এসব বিষয় সমাধান করার দাবি জানান স্বজনরা।
এডভোকেট মহসিন কবির মুরাদ বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য সে অনুপাতের জনবল নাই। ফলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের শিশু কনস্যালটেন্ট ডা. মো. ইছমাইল হাসান বলেন, ঠান্ডাজনিত কারনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি সামনে আরো বাড়ার আশংকা করছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তারপরও চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সাধ্যমতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, গত ৮ মাসে সদর হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ২শ ৯৩জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সদর হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত জনবলের সংখ্যা ১৫৪জন। আছে ১০৪জন। দীর্ঘদিন ধরে গাইনি,নাক-কান গলা ও চক্ষু এবৎং সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক পদ খালি থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।