শিরোনাম
ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় সম্পর্কে এটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেছেন, 'আমি মনে করি আপিল করা উচিত। তবে, রায় দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল করা হবে কি না জানতে চাইলে এটর্নি জেনারেল আজ এ কথা বলেন।
এই মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত সকল আসামীকে খালাস দিয়ে আজ রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ। আসামীদের আপিল গ্রহণ করে রুল যথাযথ ঘোষণা এবং ডেথ রেফারেন্স রিজেক্ট করে মোট ৪৯ আসামীকে খালাসের রায় দেয়া হয়।
আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেছে কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিকে সাজা দেয়া যায় না। আর দ্বিতীয় অভিযোগপত্র ছিল অতিমাত্রায় বেআইনি। দ্বিতীয় অভিযোগপত্রটি আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করা হয়নি। তা ছাড়া প্রথম অভিযোগপত্রটিও গ্রহণযোগ্য না, কারণ ওই অভিযোগপত্রটিও মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে যা তিনি পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট বাদ দিয়ে ২২৫ জন সাক্ষীর কেউই বলেননি, আমি গ্রেনেড ছুড়েছি বা ছুড়তে দেখেছি। ফলে প্রকৃত খুনী কে, সেটি নাই। ফলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় না।’
আসামি পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের ৪০০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সাজা দেয়ার নজির নেই।
তিনি বলেন, '৪০০ বছরের ইতিহাসে ভারতীয় সাবকন্টিনেন্টে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেয়া হয়েছে এমন কোন নজির নেই।' তিনি বলেন, এ মামলার আসামি মুফতি হান্নান দুবার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। টর্চার করে তার কাছ থেকে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি গ্রহন করার অভিযোগ ছিল। দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি। এ স্বীকারোক্তীর কোন আইনগত ভিত্তি নেই এই কথা আমরা আদালতে বলেছি।
এডভোকেট শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালত এ মামলায় ৪৯ জনকে সাজা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে রায় দিয়েছিল বিচারিক আদালত। তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের শুনানি শেষে সকলের আপিল মঞ্জুর করেছেন উচ্চ আদালত। বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে জারি করার রুল যথাযথ বলে ঘোষণা করেন আদালত। সকলকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রায়ে নিম্ন আদালতের ট্রায়ালকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আইনের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতে বিচার কার্যক্রম হয়নি। বিচারিক আদালতে দেয়া এক সাক্ষীর সাথে অন্য সাক্ষীর সাক্ষ্যে কোন সামঞ্জস্য নেই।
এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামীকে খালাস দেয়া রায়ের পর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে তারেক রহমান ন্যায় বিচার পেয়েছেন। প্রমাণ হয়েছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে এই মামলায় সাজা দেয়া হয়েছিল। সেই মামলায় আইগতভাবে মোকাবেলার মাধ্যমে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। গত দুই দশক এই মামলা দেশের রাজনীতিতে প্রভাব রেখেছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছেন তারেক রহমান। দেশবাসী মনে করে আজ তারেক রহমান ন্যায়বিচার পেয়েছেন।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও কয়েকশো মানুষ আহত হন। ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
এ মামলায় বিএনপি'র শীর্ষ নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে বারবার দাবি করে আসছিল দলটি। আজ রায়ে সেটিই প্রমাণ হলো বলে দাবী করেছেন আইনজীবীরা। তারা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।