বাসস
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১২
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৪১

শ্বেতপত্রে দুর্নীতির বেশ কিছু প্রভাবশালী চ্যানেল খুঁজে পাওয়া গেছে

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ব্যাংকিং ঋণ কেলেঙ্কারি, ঋণের অপব্যবহার এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অলাভজনক প্রকল্পসহ দুর্নীতির বেশ কয়েকটি প্রধান খাত চিহ্নিত করেছে, যা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ শাসনামলে ব্যাপক ও গভীর দুর্নীতি প্রকাশ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আজ রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে দুর্নীতির প্রধান প্রধন ক্ষেত্রগুলো উন্মোচন করে গণমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছেন।

এ সময় কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রভাবশালী চ্যানেলগুলো নিম্নবর্ণিত ব্যাংকিং ঋণ কেলেঙ্কারি, ব্যাংক ঋণ প্রতারণা, ঋণের অপব্যবহারের বর্ণনা তুলে ধরেছে।

ব্যাংক জবর দখল : রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় ব্যাংকের মালিকানা জোরপূর্বক দখল করা হয়।

অবৈধ আর্থিক বহিঃপ্রবাহ: অবৈধভাবে অর্জিত বিপূল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার করা হয়।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অলাভজনক প্রকল্প: অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প,  সময়সীমা ও প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে সম্পদের অপচয়। 

বর্ধিত প্রকল্প ব্যয়: তহবিল তসরুসের জন্য পদ্ধতিগত ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত মূল্য ধরা হয়।

অনুমোদনের পরে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি: তহবিল সরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশে প্রকল্প অনুমোদনের পরে ব্যয় কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়।

অ-প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার প্রক্রিয়া: সরকারি ক্রয়ে যোগ্য দরদাতাদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

অপ্রয়োজনীয় বা দুর্বল প্রকল্প: দুর্বল সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, সময়সীমা বাড়ানো এবং ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সম্পদ নষ্ট হয়।

নিয়োগে স্বজনপ্রীতি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে প্রায়ই যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ভিত্তিতে প্রকল্প পরিচালকদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

অবৈধ জমি ও সম্পদ অধিগ্রহণ: জমি ও সম্পদ অবৈধ উপায়ে বাজেয়াপ্ত বা অধিগ্রহণ করা হয়।

ভূমি অধিগ্রহণ তহবিলের অপব্যবহার: রাজনৈতিকভাবে দুর্বল জমির মালিকদের অন্যায় চুক্তিতে বাধ্য করা এবং জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিলের অপব্যবহার করা হয়।

অত্যধিক মূল্যের চুক্তি প্রদান: চুক্তিগুলো প্রায়ই রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত ঠিকাদারদের প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই অতিরিক্ত মূল্যে দেওয়া হয়।
প্রকল্প সম্পদের অপব্যবহার: ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক লাভের জন্য যানবাহন, ভ্রমণ বাজেট ও অন্যান্য প্রকল্প সম্পদের অপব্যবহার।

স্ট্যান্ডার্ড ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস হিসেবে ঘুষ: প্রক্রিয়াগুলো ত্বরান্বিত করতে বা সুবিধা পেতে নিয়মিত ঘুষ বিনিময় করা হয়।

জনগণের অর্থের অপব্যবহার: উন্নয়নের উদ্দেশ্যে করা তহবিল নেতাদের রাজনৈতিক ও/বা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়।

অভিজাতদের জন্য কর ছাড়: ট্যাক্স নীতিগুলো প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপকৃত করে।

বিকৃত সাপ্লাই চেইন: ম্যানিপুলেটেড সাপ্লাই চেইন অন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও বাজারের অদক্ষতার দিকে চালিত করে।

অভ্যন্তরীণ তথ্য ফাঁক করা: আর্থিক লাভের জন্য নীতি ও সিদ্ধান্তগুলো বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে ফাঁস করা হয়।

দুর্নীতিে যোগসাজশ: পারস্পরিক সুবিধার লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যোগসাজশে লেনদেন।

চাঁদাবাজি-ভিত্তিক দুর্নীতি: জোর করে ঘুষ নেওয়া অথবা অন্যায্য লেনদেনে বাধ্য করা।

একচেটিয়া দুর্নীতি: নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বাজার কারসাজি করা হয়।
প্রাক-তথ্য ফাঁস করার দুর্নীতি: গোপন তথ্যে আগাম প্রবেশাধিকার অন্যায্য সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়।

তথ্য গোপনের দুর্নীতি: স্টেকহোল্ডারদের বিভ্রান্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আটকে রাখা।

নিষ্ক্রিয়তার দ্বারা দুর্নীতি: বিশেষ সুবিধা গ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা হয়।

কেরিয়ারের উন্নতির জন্য দুর্নীতি: পদোন্নতি বা প্রভাবশালী পদগুলো সুরক্ষিত করার জন্য ঘুষ ও যোগাযোগ ব্যবহার করা হয়।

কমিশন-বণ্টন দুর্নীতি: উচ্চ-স্তরের কর্মকর্তারা অনুমোদনের জন্য কমিশনের ভাগ দাবি করে।

রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য দুর্নীতি: সম্পদ ও সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক আনুগত্য বা অনুগ্রহ সুরক্ষিত করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

আইনগত ম্যান্যুপুলেশন দুর্নীতি: স্বার্থসংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি তৈরি করা হয়।

শ্বেতপত্রের পর্যালোচনায় ব্যাংকিং খাতকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের শীর্ষে রাখা হয়। এর পরে স্থান পায় ভৌত অবকাঠামো এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।

কাগজটি বলেছে, অপারেশনাল ও প্রযুক্তিগত অভিনবত্বের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অন্যতম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়। বিস্তৃত দুর্নীতি চর্চার এই তালিকাটি সুশাসন, অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা পুনরুদ্ধারে পদ্ধতিগত সংস্কার এবং শক্তিশালী জবাবদিহি ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।