শিরোনাম
ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : রাজধানীতে অনুষ্ঠিত আজ এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, রাজনীতিবিদদের আজ্ঞাবহ এবং ঔপনিবেশিক মনোভাবপুষ্ট প্রশাসন দেশের জনগণ চায় না। জনপ্রসাশনের স্বচ্ছতা দেশে সুশাসন, নীতি বাস্তবায়ন এবং সুষ্ঠু জনসেবা প্রদানের পূর্বশর্ত। জনপ্রসাশনকে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জনমুখী ও মেধাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য এর কার্যকর সংস্কার সময়ের দাবি।
তারা বলেন, যখন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছাড়া পদোন্নতি সম্ভব হয় না তখন প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে সরকারি চাকরি এতো লোভনীয় হয়ে উঠেছে। কাজেই, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রশাসনে আবশ্যিকভাবে কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন অতীব জরুরি।
বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের কারণে পদোন্নতি আটকে দেওয়ার মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। স্বার্থ রক্ষায় আমলাদের বাধ্য করার প্রবণতা থেকেও রাজনীতিবিদদের বিরত থাকতে হবে। এছাড়া, আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য দূর করাও আবশ্যক। দুর্নীতি এবং জনগণের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনাসহ নানাবিধ চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে জনপ্রশাসনের গঠনমূলক সংস্কার জরুরি এবং সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের সম্পৃক্ততা ও স্বদিচ্ছাও প্রয়োজন।
দ্য ডেইলি স্টার ভবনে ইউএনডিপি’র আয়োজনে ‘বাংলাদেশের জনপ্রশাসন : নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সংস্কার সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড আ্যাম্বাসির সহায়তায়, ইউএনডিপি’র স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস, পলিসিস অ্যান্ড সার্ভিসেস (এসআইপিএস) প্রকল্প এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির (সিবিপি) গবেষণা সহায়তায় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সাথে যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য খন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান ও ড. রিজওয়ান খায়ের, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মার্গা পিটার্স, ব্রিটিশ হাইকমিশনের সিনিয়র গভর্ন্যান্স এডভাইজার নেইল গান্ধী, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র গভর্নেন্স অ্যাডভাইজার নাজিয়া হাশেমি ও ইউএনডিপি’র সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক।
আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, শিক্ষার্থী ও যুব প্রতিনিধি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি এবং ইউএনডিপির কর্মকতারা।
আইনি সংস্কার ও নীতি কাঠামো, জনপ্রশাসন পরিচালন প্রক্রিয়ার আইনি ও নীতিগত কাঠামোর মূল্যায়ন ও হালনাগাদকরণ, মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার কৌশল প্রণয়ন, জনপ্রশাসন কার্যক্রমকে সুবিন্যস্ত ও জবাবদিহি করতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পায়।
আলোচনায় আরও উঠে আসে জনপ্রশাসনের পরিসর হ্রাস, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পৃথক করে মাঠ প্রশাসনের কর্মভার হ্রাস, নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে জনপ্রশাসনের কর্মক্ষেত্রকে পরিবর্তন, জনপ্রশাসনকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্যে প্রস্তুত করাসহ নানা বিষয়।
এছাড়া, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণ, নিয়োগের ভেরিফিকেশন পর্যায়ে রাজনৈতিক হয়রানি হ্রাস, পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে রাজনীতিকরণ থেকে দূরে রাখা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে না দেয়া, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য কোটাধারীদের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরীক্ষাপদ্ধতি গ্রহণ, আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকেন্দ্রীকরণ, জেন্ডার রেসপনসিভ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রশাসন নিশ্চিতকরণ, জনপ্রশাসনে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের জন্যে সুযোগ বৃদ্ধি, পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা মতাদর্শের বাইরে গিয়ে কেবল যোগ্যতাকে মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণের উপর বক্তারা গুরুত্বারোপ করেন।