শিরোনাম
॥ আল-আমিন শাহরিয়ার ॥
ভোলা, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : উপকূলীয় জনপদ ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে সাধারণ জেলে ও নৌযানের তেমন নিরাপত্তা নেই। নদীতে স্বাধীনভাবে মাছধরা ও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত জেলেরা। তাদের মতে,বিগত সময়ে এতদাঞ্চলের নদীগুলোতে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছে-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করতো জেলেদের মাছ শিকারের নিশ্চয়তা।
উপকূলীয় জেলা ভোলার বিভিন্ন জেলেপাড়া ও মাছঘাটগুলোতে সেখানকার ভু্ক্তূভোগীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এমন তথ্যই জানান। ভোলার মেঘনা নদীর মধ্যখানে অবস্থিত মাঝের চর নামক এলাকার বাসিন্দা কামাল, রতন ও ইউসুফ মাঝি অভিযোগ করে বলেন,ভোলার সাবেক কাচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম নকীব'র নির্দেশ ছাড়া আমরা নদীতে মাছ ধরতে পারতামনা। তারা বলেন, এ নেতার কাছ থেকে লাল টোকেন কিনে নদীতে যেতে হতো। রামদেবপুর চরের অপর মাছ শিকারী আলাউদ্দিন মাঝি ও হাবু মাঝির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নকীব চেয়ারম্যানের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো সোহেল মোরাদার। । সূত্রমতে,ওইসব ক্ষমতাধরদের ফরমান না মানলে জাল,নৌকা আর ইঞ্জিনসহ মাঝিমাল্লাদের অপহরণ করে নিয়ে যেত দস্যুবাহিনী। বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের বিনিময়ে জেলেদের ফিরিয়ে দেয়া হতো।
উপকূলের জেলেরা জানায়,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার বিপ্লবের পরও থেমে ছিলনা জেলেদের উপর সোহেল বাহিনীর তান্ডবলীলা। ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হাসনাঈন পারভেজ বাসস'কে জানান, গত সপ্তাহে সোহলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান,ওসি।
এদিকে উপকূলীয় জেলা ভোলা ও তৎসংলগ্ন নদ-নদীগুলো এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি। জেলেদের মতে, সময়ের পালাবদল হলে মাছের উপর ভাগ বসানোদের বদল এখনো হয়নি। ফলে একেতো জেলেরা দাদনের যাতাকলে পড়ে পিষ্ট হচ্ছে। নদ-নদী ও জেলে এবং জলযানের সুরক্ষায় এখানে কোষ্ট গার্ড,নৌবাহিনী ও নৌ পুলিশ সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থেকে সন্ত্রাস দমনে কাজ করলেও জেলেদের শঙ্কা কাটেনি।
এদিকে মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর ভোলার মেঘনা নদীতে অবৈধ জাল পেতে মাছের ধ্বংস করতে বারণ করার দায়ে জেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের হামলার শিকার হতে হয়েছে জলদস্যুদের হাতে।
অস্ত্রধারীদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের কাঠির মাথা নামক সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন-ভোলা সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মাহামুদুল হাসান, মৎস্য অফিসের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম, ইলিশ প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহকারী তানজিল আহমেদ, কোস্টাল প্রকল্পের আবু জাফর ও তাদের ট্রলার মাঝি মো. জামাল।
আহতরা জানান, সকালের দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসানের নেতৃত্বে মৎস্য বিভাগের একটি টিম সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের কাঠির মাথা সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অভিযান চালায়। এসময় স্থানীয় শাহিন নামের একজনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে মৎস্য কর্মকর্তাসহ ৫ জন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় জেলেদের সহযোগিতায় তাদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাসস'কে জানান, প্রাথমিকভাবে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাঁধা ও হত্যাচেষ্টা মামলার হয়েছে।
ভোলা সদর হাসপাতালে আহতদেও দেখতে আসেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীলসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ। ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাঈন পারভেজ বাসস'ককে বলেন,নদীতে আধিপত্য ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জেলেরা জানান,নদীর এসব দস্যুবাহিনীর কাছে ভোলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মৎস্যজীবীরা জিম্মি হয়ে আছে।