শিরোনাম
ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মোঃ আলমগীর আলম অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন), মো. আকরাম হোসেন অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস), আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ, অতিরিক্ত আইজি (এইচআর), মোঃ রেজাউল করিম ডিআইজি (অপারেশনস), মোঃ কামরুল আহসান ডিআইজি (কনফিডেন্সিয়াল)।
আইজিপি বলেন, মামলা হলে বা মামলায় নাম থাকলেই পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করবে না। যদি কেউ মনে করেন নিজে কোনো ইন্ধনে বা কোনো ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নন তারা সরাসরি পুলিশের কাছে আসুন। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করবে না। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।
আইজিপি বলেন, সরকারও বলেছে- কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন পরবর্তীতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক মামলা হয়েছে। আমরা প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করেই আদালতে চার্জশীট বা ফাইনাল রির্পোট দাখিল করবো।
আইজিপি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউ প্রতারিত হবেন না, যদি মনে করেন নিজের কোনো ইন্ধন বা সংশ্লিষ্টতা নেই তাহলে সরাসরি পুলিশের কাছে আসুন।
আমরা বিনা যুক্তিতে বা তদন্ত ছাড়া পাইকারি হারে গ্রেফতার করবো না। মামলা থাকলেই বা নাম থাকলেই গ্রেফতার করতে হবে আইনেও নেই। এটা যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে যে আপনি জড়িত বা অপরাধী।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা তো নির্বাচনের পর্যায়ে যেতে পারিনি। এখন আমরা পুলিশ ফোর্সের মনোবল ফিরিয়ে আনা এবং তাদের মধ্যে কাজের স্পৃহা জাগানো এবং পুলিশকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা পায়। আমরা সেই জায়গায় আগে যেতে চাই।
তিনি বলেন, আমি সামনের সপ্তাহ থেকে প্রতিটি বিভাগে গিয়ে পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে কথা বলতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। তাদের মধ্যে অনেক হতাশা, ক্ষোভ আছে। সেই জায়গাগুলো দেখতে চাই। পুলিশ বাহিনীকে ওই পর্যায়ে নেওয়ার পর পরবর্তীতে নির্বাচনের বিষয়টি আমরা চিন্তা করবো। নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার যে পুলিশি সাহায্য, এটা করার পূর্ণ ক্ষমতা আমাদের আছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো আমরা করেছি। এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম।
আইজিপি বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ হওয়া প্রত্যেকের পরিবারের কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন বাহিনীর নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
আইজিপি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা, শিশু-কিশোর ও সাধারণ মানুষ শহিদ হয়েছেন। এছাড়াও কর্তব্যপালন করতে গিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। আমি সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। যারা আহত হয়েছেন, তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বার্থরক্ষায় পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা বাড়াবাড়ি ও আইনভঙ্গ করেছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক নিরপরাধ পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকান্ডই নিন্দনীয়।
তিনি পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রত্যেক শহিদ পরিবারের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বাহারুল আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ পুলিশ এক বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পুলিশের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করতে হয়েছে। তবে দেশবাসীর প্রত্যাশা ও সহযোগিতায় এবং সরকারের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা ফিরে আসছে। দেশের জনগণের সমর্থন ও সহায়তা ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দুরূহ। এ বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।