বাসস
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৫৪
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে করা ভোটার তালিকা দ্রুত ও নির্ভুল হবে : আব্দুল মঈন খান

ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বিএনপির নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিটির আহবায়ক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমতা (এআই) ব্যবহার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আসলে সত্যিকার অর্থে অনেস্টলি সঠিক ভোটার তালিকা আমরা দেখতে চাই। তাহলে কিন্তু বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আমরা আপগ্রেড চাই, এজন্য কম্পিউটার এআই ব্যবহার করতে পারি। আজকে কিন্তু কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে, সেটা এ্যাবসুলেটলি একুরেট হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, অপ্রয়োজনীয় এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে। এ বিষয় (ভোটার তালিকা) আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছি, এটা আপগ্রেড হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মঈন খান বিগত সরকারের আমলে আরপিও’র সংশোধনে যে সম্পূরক আদেশ এনেছিলো তা বাতিল চেয়ে বলেন, নির্বাচনী পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা আপগ্রেড করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বিএনপি সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে দেয়া হয়েছে।

মঈন খান বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য, যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ডামি প্রতিনিধি বা ভুয়া প্রতিনিধি না, সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে বিগত সরকার অনেক কিছু করেছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি তারা যাতে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে না পারে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে সেজন্য আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রনীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।’
 
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি সে অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয় নাই যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেয়া ইত্যাদি। আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কারের কথা বলেছি, যার জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি সেগুলো মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুব বেশি বিলম্ব হওয়ার প্রয়োজন হয় না।’

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি দলের পক্ষ থেকে সুচিন্তিত ভাবে, এক্সপার্ট কমিটির সঙ্গে বসেছি, অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। যেসব সংস্কারের কথা বলেছি, সেগুলো বেশির ভাগই আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়। প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয় যেমন- ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নতুন ভোটার সংযোজন কি কি ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার স্ক্রটনি করা, তারপরে নির্বাচন কাজে অফিসার নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গুছাতে প্রাকটিক্যালি ২ থেকে ৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের আরো সংস্কার- প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে এগুলো সব সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি সময় লাগবে। সব রিকমন্ডেশন ফাইনাল হওয়ার পরে আপনারা ধারণা পাবেন প্রাকটিক্যালি আমাদের কয়দিন সময় লাগবে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন অনুষ্ঠানের জন্য।’

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে, এটাই ছিলো সবচাইতে বড় বাধা একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার।’
তিনি বলেন, ‘ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা এসব হচ্ছে উপসর্গ। আসল রোগ হচ্ছে- কেয়ারটেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পূনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারটেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব যেটা করেছি, সেটা হলো যাদের নেতৃত্বে যেসব অপকর্ম হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি, যাতে তারা আগামীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না থাকে সেই প্রস্তাব আমরা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকছে তার নির্বাচনী কোনো স্ট্যাক নাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। আর যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে, তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের অপকর্মের সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলো বা থাকতে পারে তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এমন লোকদেরকে নিযুক্ত করা যারা এই ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবেন না সেটা আমরা বলেছি।’