শিরোনাম
সাতক্ষীরা, ১১ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জনবল সংকটের কারনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও দেখা পাচ্ছেন না চিকিৎসকের। এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হতে হচ্ছে অনেকে।
১০০ শয্যার এ হাসপাতালে দৈনিক গড়ে প্রায় ২০০ রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসে আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জন রোগী। রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এ হাসপাতালে ২৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। খালি রয়েছে ১২ টি পদ। এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৫১ টি পদ খালি রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৭টি পদের মধ্যে ১২ টি পদ শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ১টি, সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থ.সার্জারি) ১টি, সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ১টি, সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ১টি, সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) ১টি, সিনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি) ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ১টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিষয় বিহীন) ১টি, মেডিকেল অফিসার ২টি ও রেডিওলজিস্ট ১টিসহ মোট ১২টি পদ শুন্য রয়েছে।
এছাড়াও ২য় ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে নার্সিং সুপার ভাইজার দুটি পদের মধ্যে ১টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৬৮ টির মধ্যে ৫টি, মিডওয়াফ ৬ টি, সহকারী নার্স ৫টির মধ্যে ২ টি, মেডিকেল টেকনোলজি (ল্যাব) ৫টির মধ্যে ৩ টি, মেডিকেল টেকনোলজি (রেডিও) ৩টির মধ্যে ২টি, মেডিকেল টেকনোলজি (ডেন্টাল) ২টির মধ্যে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজি (ফিজিও) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজি (ইসিজি) ১টি, কার্ডিওগ্রাফার ২টি, ক্যাশিয়ার ১টি, টিকিট ক্লার্ক ১টি, পাম্প মেশিন অপারেটর ১টিসহ মোট ২৭ টি পদ শুন্য রয়েছে। অপরদিকে, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে ২৪ টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে মোট ৮টি পদ।
সরেজমিনে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সেবা নিতে আসা অনেকের মুখে হতাশার ছাপ। কারণ তারা অনেকেই তাদের কাঙ্খিত ডাক্তারকে পাচ্ছেন না। যারা ডাক্তার দেখাতে পারছেন তারা খুশি। আর যারা পারছেন না তারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এমনই একজন আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের আজগর আলী। দীর্ঘদিন ধরে চোখ নিয়ে ভুগছেন তিনি। এসেছিলেন চোখের ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু চোখের ডাক্তার না থাকায় বাধ্য হয়ে বেসরকারী হাসপাতালে ৫০০ টাকা দিয়ে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, গরীব মানুষ এসেছিলাম সরকারী হাসপাতালে ফ্রি ডাক্তার দেখাতে কিন্তু পারলাম না। আমার মত গরীব মানুষের পক্ষে ৫০০ টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানো এখন খুবই কষ্টকর।
হার্টের সমস্যা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন আশাশুনি উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম বাবু। তিনি জানান, সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তবে বর্তমানে যারা চিকিৎসক রয়েছেন তারা ভালোভাবে তাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তবে, এখানে খাবারের মান নিম্ন মানের। তিনি বাইরে থেকে ও বাড়ি থেকে খাদ্য নিয়ে খাওয়া দাওয়া করেন বলে জানান।
সদর উপজেলার নেভাখালী গ্রামের হায়দার আলী শরীরে জ্বর নিয়ে ভর্তি রয়েছেন, তিনি বলেন, গত দুই দিন ভর্তি হয়েছেন তিনি। চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়েছেন সেগুলো করিয়েছি। তবে, এখনো রিপোর্ট পাইনি।
আশাশুনি উপজেলার দরগাপুর গ্রামের তহিদুল ইসলাম তার ৬ মাস বয়সী ছেলের থ্যালাসেমিয়া নিয়ে গত ৭ দিন ভর্তি রয়েছেন। তিনি জানান, সদর হাসপাতালে চিকিৎসক কম থাকলেও এখানে যারা চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন তারা তাদের ঠিকমত দেখভাল করছেন। তবে, খাবারের মান তেমন ভালো না বলে জানান।
তবে, জনবল সংকটের এ দুর্দশা থেকে মুক্তি চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তোভোগীরা।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফয়সাল জানান, জনবল সংকটের কারনে রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। সদর হাসপাতালে এ মুহুর্তে আমাদের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ও সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) ডাক্তারের খুবই প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম জানান, সদর হাসপাতালে জনবল সংকেটর কারনে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বহুবার অবহিত করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি এডিজি প্লানিং ও পরিচালক প্রশাসনকেও দেখা করে বলেছি। তারা বিষয়টি দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালের রোগীদের নিম্নমানের খাবার দেয়া দেয়া হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার ৭/৮ বছর ধরে হাসপাতালে খাওয়ার কোন টেন্ডার হয়না।