শিরোনাম
ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর দেশে এক ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিলো। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করেছিলো।
আজ বুধবার ‘ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ ঘোষিত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
নিতাই রায় চৌধুরী আরও বলেন, ২০০৮ এর পাতানো নির্বাচনের পর অনেক নতুন নতুন আইন করে আওয়ামী লীগ সরকার। সংশোধনের নামে বিধ্বস্ত করে ফেলে সংবিধান। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকবে- প্রশাসনের লোকজনও বুঝতে পেরে তাদের অনুগত হয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগি করে, দখল বাণিজ্য করে, দেশের টাকা লুট করে তারা ১৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
তিনি আরও বলেন, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে শেখ হাসিনা। আর প্রতিপক্ষকে তারা সহ্য করতে পারতনা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৬০ লাখ মামলা করেছে। ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, চারটি সংস্থা বক্তব্যের জন্য ফোন করে বাংলাদেশের অবস্থা জানতে চায়। তাদেরকে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের গভীরতা আপনাদের বুঝতে হবে। এটা কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল না। এটা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে নেমেছিলো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলছে দেশ, আগের চেয়ে হিন্দুদের কালিপূজা, দূর্গাপূজা আরও নির্বিঘ্নে পালিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, শেখ মুজিব ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। অন্যদেরও পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। আর ৭৫ এ হত্যাকান্ডের পর শেখ মুজিবের মন্ত্রীসভার ২২ জন সদস্য খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে বঙ্গভবনে গঠিত সরকারে যোগদান করেছিলেন। অথচ তার লাশ ৩২ নাম্বার বাড়িতে পড়েছিলো। তার নামাজে জানাজা পর্যন্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়েছিলো। ২৪ এ শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছে। এমপি, মন্ত্রী, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবও পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এক পলাতক শক্তি। বিদেশে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, দেশে আর ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান হবে না।
নিতাই রায় চৌধুরী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, অতীব প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে নির্বাচন দিন। কেননা, জনগণ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এর জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলো শুরু করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। নির্বাচন ও সংস্কার-এ দু’য়ের মধ্যে সমন্বয় করে সরকার একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে মনে করছেন তিনি।
তিনি বলেন, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য চলবে না। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লায়ন মো. রবিউল হোসেন রবির সভাপতিত্বে আলোচনায় উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উৎখাত করেছিলো শেখ হাসিনা, অথচ আজ তিনি বাড়ি নয়, দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। নতুন বাংলাদেশে আমরা আর কোন নিষ্ঠুর আচরণ দেখতে চাই না। সবার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা পালোয়ান রুহুল আমিন ঢালী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি মো. আফতাব হোসেন মোল্লা, কেটিএস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক হিরো, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সোহরাব ভুঁইয়া, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. মো. শফিউর রহমান, কবি প্রশান্ত হালদার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল শাহবাগ থানার সভাপতি জসিম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো. ইদ্রিস আলী, শেখ আব্দুল হক চাষী প্রমুখ।