বাসস
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:২১
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪৮

লং মার্চে ভারতকে প্রভুত্ব ছেড়ে বন্ধু হওয়ার আহ্বান বিএনপির তিন সংগঠনের নেতাদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১১  ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : ভারতকে প্রভুত্ব ছেড়ে বন্ধু হওয়ার আহ্বানের মধ্যে দিয়ে বিএনপি’র ঢাকা-আগরতলা লং মার্চ কর্মসূচি শেষ হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে আয়োজিত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয় বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের লং মার্চ কর্মসূচি।

সমাবেশ থেকে ভারতকে প্রভুত্ব ছাড়ার বার্তা দিয়ে বন্ধুত্বের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি, সব ধরনের ষড়যন্ত্র বন্ধে দেশটির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা অবমাননা, ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন- ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই লং মার্চ কর্মসূচির আয়োজন করে।

লং মার্চ কর্মসূচিতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএস জিলানী সভাপতিত্ব করেন। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়বাদী যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।

বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা থেকে আসা লং মার্চের গাড়ি বহর আখাউড়ায় প্রবেশ করে। তবে যানজটের কারণে সব গাড়ি বন্দর এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি। লং মার্চ উপলক্ষে সকাল থেকে আশে পাশের জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আখাউড়ায় আসতে থাকেন। দুপুরে আখাউড়া বন্দর এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

সমাবেশে যুবদল সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। 

যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনচেতা। বাইরে বাংলাদেশের কোনো প্রভু নেই। তারা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চায়। সার্বভৌম প্রশ্নে এদেশের মানুষ প্রয়োজনে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত আছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন। আমাদের কাছে বাংলাদেশই প্রথম। বাংলাদেশ আমাদের প্রাণের স্পন্দন। স্বাধীনতা যুদ্ধ করে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পাইনা। তিনি অবিলম্বে খুনি শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার জন্য অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, এদেশে আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব নেই। এদেশের মানুষ ভারতের আগ্রাসী মনোভাব মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ। আবার যদি বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা হয়, তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

যুবদল সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ভারতে বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানোর সময় সেখানে পুলিশ নীরব ছিল। এটি অবমাননা। তারা প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু বন্ধু হতে পারেনি। স্বাধীনতার পর থেকে তারা শোষণ করে চলেছে। আমরা জামদানি পাঠাই, ইলিশ পাঠাই। তারা ফেলানীর লাশ উপহার দেয়।

এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি আহবায়ক আবদুল মান্নান, সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম ও জেলা বিএনপি সদস্য কবির আহাম্মেদ ভূইঁয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ভারতীয় সীমান্তে সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। 

এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-৬০ (সুলতানপুর) অধিনায়ক লে. কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার জানান, সীমান্তে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সারাদিন সতর্ক অবস্থানে ছিল বিজিবি।

এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আখাউড়ায় ভারত সীমান্ত অভিমুখে লংমাচ শুরু করে বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ‘লংমার্চ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমর্থন দিচ্ছে। ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ!’

তিনি বলেন  ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার লোকেরা নিজেদের কথায় চলুক, এটা ভারত চায় না। দিল্লির কথায় চলতে হবে কেন ? 

লংমার্চ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল ৭ টা থেকে তিন সংগঠনের নেতা-কর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। সংগঠন তিনটির নেতা-কর্মীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে এবং হাতে ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন। সরেজমিনে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নয়াপল্টন থেকে তাদের লংমার্চ শুরু হয়েছে। লংমার্চের বহরে বিপুল সংখ্যক গাড়ি ছিল।

সকাল সাড়ে ৯ টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে পল্টন-ফকিরাপুল-ইত্তেফাক মোড়, ফ্লাইওভারে হয়ে, সাইনবোর্ড-চিটাগং রোড-কাঁচপুর মোড়-তারাব-বরফা-ভুলতা, গাউছিয়া-চনপাড়া, মাধবদী-পাঁচদোনা-সাহেপ্রতাব, ভেলানগর-ইটখোলা-মারজাল-বারুইচাহয়ে ভৈরব পৌঁছায়। 

কিশোরগঞ্জ থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত লংমার্চের সংক্ষিপ্ত পথ সভা ভৈরব মোড়ে অনুষ্ঠিত হয়। 
সভায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন,‘বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটির দিকে তাকালে, তার সমুচিত জবাব দেয়া হবে। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লং মার্চ করছি। ভারত নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের গণ-আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার সকল দোসরদের আশ্রয় দিয়েছে। আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ না। এই বাংলাদেশ শহীদ জিয়ার, খালেদার জিয়ার, তারেক রহমানের বাংলাদেশ।’ 

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে পথ সভায় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন। 

নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, গাড়ির বহর নারায়গঞ্জ পৌঁছালে বিভিন্ন প্লেকার্ড-ফেস্টুন ও স্লোগানে স্লোগানে লংমার্চকে স্বাগত জানায় জেলা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। আখাউড়া অভিমুখে এই লংমার্চে যোগ দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, মৌচাক ও শিমরাইল মোড়ে এই তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়।