শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মদানকে জাতীয় জীবনে ধারণ করে দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান ।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, এই দেশ আত্মত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে। বহু মানুষের রক্তের ঋণে আজ আমরা এখানে। শহিদ বুদ্ধিজীবীরা তাদের প্রাণের বিনিময়ে এই দেশ আমাদের দিয়ে গেছেন। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রক্তের ঋণ স্বীকার করতে হবে। তাদের রক্তের মূল্য দিতে হবে আমাদের দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে। তাদের আত্মদানকে জাতীয় জীবনে ধারণ করে দেশ গঠনের কাজে আমাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও সর্বশেষ ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতির প্রয়োজনে সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছে ও অসাধ্য সাধন করেছে। এই ধারাবাহিকতা আমাদের সামনের দিনগুলোতেও এগিয়ে নিতে হবে।
উপাচার্য বলেন, যার যার জায়গা থেকে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের কাজগুলো এগিয়ে নিতে শহিদ পরিবারদেরকে আমাদের পাশে চাই। জাতিস্বত্তার পরিচয়ে সবাইকে এক থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
সভার শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ এবং শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। এ সময় বক্তারা বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
আলোচনা সভায় বক্তা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের কনভেনার শামসুজ্জামান দুদু শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে বলেন, দেশকে চূড়ান্তভাবে মেধা শূন্য করতেই ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। ২৫শে মার্চও প্রথম আক্রমণ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে নিতে হবে বলেও তিনি জানান।
এসময় শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. সাজেদা বানু। তিনি শহিদ বুদ্ধিজীবী ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন আহমেদের বোন। সাজেদা বানু ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতা ও নৃশংসভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নৃশংসভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। আমার ভাই গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এই নৃশংসতার শিকার। ভাইয়ের কাছে শেষ চিপস ও কোক খেতে চেয়েছিলাম তা আর সম্ভব হয়নি। আজও আমি তা খেতে পারিনা।
‘প্রতিটা দিনই আমাদের শোকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়’- একথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
সাজেদা বানু আরও বলেন, আপনারা শহিদ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাকে এখানে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে নতুন প্রজন্মের অনেকেই আমাদের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের চেনেন না। বিষয়টি দুঃখজনক।
মুক্তিযুদ্ধে শহিদ সকল বুদ্ধিজীবীর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে বলেও তিনি জানান।
অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন অনুষদের ডীন ও বিভাগের চেয়ারম্যানরা আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।