শিরোনাম
/ দিদারুল আলম /
ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ (বাসস) : একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য শ্রেণী-পেশার পাশাপাশি আইনজীবীরা অসামান্য অবদান রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশের বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি ঢাকা বারের আইনজীবীদের অনেকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। তখন ঢাকা বারে আইনজীবীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩শ’। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন ৬ জন। মুক্তিযুদ্ধে শহিদ আইনজীবীরা হলেন- একেএম সিদ্দিক (হেনা মিয়া), বাবু লাল মোহন সিকদার, মো. ইসহাক, খন্দকার আবু তালেব, মো. মফিজুর রহমান ও সৈয়দ আকবর হোসেন।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল ওই সময়ে আইনজীবীরা সারাদেশে সরাসরি এবং অনেক আইনজীবী ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধে নামেন।
শহিদ আইনজীবীদের কোন তালিকা আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সংরক্ষিত নেই। বাসসের পক্ষ থেকে শহিদ আইনজীবীদের তালিকা চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা শহিদ আইনজীবীদের কোন তালিকা সরবরাহ করতে পারেননি। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ও এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য সিনিয়র এডভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, 'মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন আইনজীবীদের অনেকে যুদ্ধে অংশে নেন এবং বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনেকে শহিদ হয়েছেন। তবে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে শহিদ আইনজীবীদের তালিকা সংরক্ষণ করা উচিৎ ছিল'।
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরী করা আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় আঁকড়ে ছিল। বার কাউন্সিলও তারা দীর্ঘসময় নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধে শহিদ আইনজীবীদের তালিকা সংরক্ষণ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্তে ও হৃদয়ে ধারণ করলে এ কাজটি তারা নিশ্চয়ই করতো'।
তিনি আরো বলেন, 'সাধারণ আইনজীবীদের বিপুল ভোটে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েও আওয়ামী আইনজীবীদের দখলদারিত্বে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার কারণে আমরা বার কাউন্সিলে দায়িত্বপালনে সুযোগ পাইনি'।
তিনি বলেন, 'ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী অপশাসনের পতনের পর দেশ নতুনরূপে গড়ার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম চলছে। বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে প্রধান বিচারপতি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় রোডম্যাপ ঘোষণা করেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন'।
ব্যারিস্টার কাজল আশা প্রকাশ করে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের কল্যাণ ও প্রত্যাশাপূরণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলও আরো কার্যকর হবে। একাত্তরে শহিদ আইনজীবীদের তালিকা সংরক্ষণ করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন এ আইনজীবী নেতা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল শহিদ আইনজীবীদের তালিকা সংরক্ষণ করবে বলে আশা নতুন প্রজন্মের আইনজীবীদেরও। তারা বলেন, আইনজীবীদের বীরত্বপূর্ণ অবদান পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে। এতে করে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং সাহস ও অনুপ্রেরণা পাবে।
দেশে শুধু ঢাকা বারের আইনজীবীদের মধ্যে ৬ জন মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা বারের ৩শ’ সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকা বারে ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নামে একটি স্মৃতিফলক রয়েছে। আইনজীবীরা যথাযথ মর্যাদায় তাদের স্মরণ করেন।