শিরোনাম
ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : সরকার চলতি বছরে ৫০ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমি থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার দেশের একক বৃহত্তম ফসলের এই জাতটি সুষ্ঠুভাবে চাষের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
হাওর এলাকায় ইতোমধ্যে বোরো চাষ শুরু হয়েছে এবং সমতল জমির কৃষকরা বীজ তৈরি করতে শুরু করেছে। বোরো মৌসুমে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ধান উৎপাদিত হওয়ায় ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়াসহ পর্যাপ্ত সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক এম সাইফুল আলম বোরো উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন সম্পর্কে বলেন, দেশের খাদ্য সরবরাহের প্রধান চাহিদা সাধারণত বোরো উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ হয়। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই মৌসুমে হাইব্রিড, বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত (এইচওয়াইভি) এবং স্থানীয় জাত চাষ করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস) সরকার সাফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সর্বোত্তম উৎপাদন অর্জনের জন্য ডিএই কৃষকদের বিআরআরআই-২৯ এর মতো উচ্চ ফলনশীল জাত চাষে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষকদের বিভিন্ন মেগা জাতের যেমন বিআর-৮৯, ৯২ এবং বিআর-১০২ চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি যাতে, কৃষকরা উল্লেখযোগ্য উৎপাদন পেতে পারে।’
ডিএই’র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান, ৩৫ লাখ ৬১ হাজার ১২ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চাষ করা হবে।
ডিএই’র তথ্যমতে, ঢাকা অঞ্চলে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৩৪ হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আনা হবে। সেখানে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ করা হবে, ৪ লাখ ৮২ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে এইচওয়াইভি চাষ করা হবে এবং ১ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা হবে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আসবে। এরমধ্যে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৪ লাখ ১২ হাজার ১ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাত (এইচওয়াইভি) এবং ৩৬৬ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চাষ করা হবে।
কুমিল্লা অঞ্চলে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬৭ হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আসবে। সেখানে ৭১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড চাষ করা হবে, ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমি এইচওয়াইভি চাষের আওতায় আনা হবে এবং ৩০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চাষ করা হবে।
সিলেট অঞ্চলে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হবে। এরমধ্যে হাইব্রিড চাষ করা হবে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে, এইচওয়াইভি চাষ করা হবে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমিতে এবং স্থানীয় জাতের চাষ করা হবে ৩ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২ লাখ ৯৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হবে। তার মধ্যে হাইব্রিড চাষ করা হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে, এইচওয়াইভি চাষ করা হবে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এবং ১৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের চাষ করা হবে।
রাঙ্গামাটি অঞ্চলে ২৭ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হবে।
রাজশাহী অঞ্চলে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে এইচওয়াইভি চাষ করা হবে, ৩৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড চাষ করা হবে।
বগুড়া অঞ্চলে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হবে। এর মধ্যে ৫১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ৪ লাখ ১ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে এইচওয়াইভি চাষ করা হবে।
রংপুর অঞ্চলে ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর জমি বোরো ধান আবাদের আওতায় আনা হবে। এরমধ্যে হাইব্রিড চাষ করা হবে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৬ হেক্টর জমিতে, এইচওয়াইভি ২ লাখ ৮০ হাজার ১৫ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের চাষ করা হবে ১ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ।
বরিশাল অঞ্চলে ২ লাখ ১৫ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমতে বোরো ধান চাষ করা হবে। সেখানে বেশিরভাগ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বোরো ধান চাষ হবে।
বোরো মৌসুমের আগে সামগ্রিকভাবে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার মজুদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ডিএই’র উপ-পরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশে বোরো মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে।
জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত, মাঠ পর্যায়ে বোরো এবং অন্যান্য শীত মৌসুমী ফসল চাষের জন্য সরকারের কাছে ১১ লাখ ৪ হাজার ৯০৮ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৫ মেট্রিক টন ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) এবং ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৩ মেট্রিক টন মুরিয়েট অফ পটাশের (এমওপি) মজুদ রয়েছে।
গত বছর ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন।