শিরোনাম
ঢাকা, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জনে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
আজ সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা কোনো বাড়তি সুবিধা নয়, এটি একটি বাধ্য-বাধকতা যা গণতান্ত্রিক নীতির ভিত্তির ওপর নির্ভর করে।
অর্থপূর্ণ সংস্কারের জন্য দৃঢ় সংকল্প নিশ্চিত করে বলছি, এমন একটি বিচারব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলছি যা জনগণের আস্থার পরিচয় দেয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতির হিসেবে শুধু সংবিধান নয়, জনগণের কাছেও শপথ নিয়েছি। তিনি বলেন, ‘আমি আইনের শাসন সমুন্নত রাখা, এই মহান প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা এবং আমাদের ন্যায়বিচার প্রদানের ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।'
প্রধান বিচারপতি জানান, তিনি ২১ সেপ্টেম্বর একটি সংস্কার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। এতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার, দক্ষতা নিশ্চিতকরণ এবং বিচারিক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিস্তারিত রয়েছে। এই রোডম্যাপের অন্যতম ভিত্তি হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা।
তিনি বলেন, আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনে অবিলম্বে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি ইতোমধ্যে সরকারের কাছে স্বল্পমেয়াদী প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, 'একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় আর নিছক আকাঙ্ক্ষা নয়, এটি এখন একটি জরুরি প্রয়োজন। বিচার বিভাগের প্রশাসনিক বিষয়গুলো নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত নয়।’
প্রধান বিচারপতি একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন। এ সংস্থা শুধুমাত্র যোগ্যতা, সততা এবং পেশাগত শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে বিচারক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী মামলার ঐতিহাসিক নিষ্পত্তির পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিষ্ঠানটিকে অবশ্যই সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের তত্ত্বাবধানে ক্ষমতায়িত করতে হবে। বিচারিক জবাবদিহিতার জন্য একটি ন্যায্য, স্বাধীন এবং অরাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনঃনিশ্চিত হবে এবং এমনকি রাষ্ট্রের আইনসভা শাখা থেকেও অযাচিত কোনো প্রভাব থেকে বিচার বিভাগের অখণ্ডতা রক্ষা পাবে।
তিনি বিজয়ের মাসে মহান একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন এবং সেই সাথে জুলাই আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে শহিদ সকল ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আগামী সময়ে দেশের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও ঘটানোর আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম। শুরুতেই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদযাপন সংক্রান্ত জাজেস কমিটির সদস্য ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র এডভোকেট ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তমতা করেন।
২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফুলকোর্ট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রথম যেদিন উচ্চ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল (১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর) সেই দিন ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করা হবে। ওই সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালন করা হচ্ছে। এবার অষ্টম বারের মতো দিবসটি পালিত হলো।