শিরোনাম
ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের প্রতি নির্যাতনের জবাব হিংসায় নয়, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দিতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রেখে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক টাঙ্গাইল জেলা, গাজীপুর মহানগর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালায় দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, কৃষি, শ্রমবাজারসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে বিএনপির বহু নেতাকর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছে। আমার ও আমার মায়ের ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাই স্বৈরাচারের অত্যাচারে মারা গেছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব তাদের মতো করে দেব না। তারা অধম বলে আমরাও অধম হব না। আমরা সকল নির্যাতনের জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব।’
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। প্রধান আলোচক হিসেবে ৩১ দফার উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মাহাদী আমিন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, বিএনপি নেত্রী হালিমা আক্তার, শাম্মী আক্তার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাক্তার মাজহারুল আলম, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল করিম রনিসহ গাজীপুর মহানগর বিএনপি এবং সব অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম ‘টেক ব্যাক’ বাংলাদেশ। এর অর্থ হলো, জনগণের বাক স্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য অর্জনে দেশের মানুষের সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের জন্য আমরা দল থেকে কী করব, দলীয়ভাবে কী পদক্ষেপ নিতে পারি- এসব আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। এর বাইরেও পাঁচ বছরে অন্তত ৫ কোটি গাছের চারা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের মানুষকেও সচেতন করতে হবে।
তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরী, আশুলিয়া, সাভারসহ ইন্ডাস্ট্রি এরিয়াতে অনেক প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া খাল এবং নদীগুলো পুনরায় খনন করতে হবে। বন্যা থেকে শুরু করে শুষ্ক মৌসুমে সব সময় পানির বিভিন্ন বিষয়গুলোর প্রতি নজর রেখে আরও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আমাদের রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়তো আমরা পারব না, তবে যতটুকু করব তা জনগণের কাছে তুলে ধরবো। তখন জনগণ এর বিচার করবে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন জানতে পারে আপনি বিএনপির কর্মী, তখনই আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তোমরা এটার কী করবে বা এটার কী করবে? আমরা আস্থার একটা পর্যায়ে আছি। আমাদের এই আস্থাকে ধরে রাখতে হবে। আগামীর ভোটই শুধু ভোট না। অনেকে বলে, তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা? আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরও পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতাকর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্টু বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টুরা আছে, থাকতে পারে। এই দুষ্টুদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ আরও অনেকে।