শিরোনাম
কুমিল্লা (উত্তর), ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে ।
থানা সদরের ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন গৌরীপুর বাস স্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দাউদকান্দি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আরও চারটি উপজেলা হোমনা, মুরাদনগর এবং চাঁদপুরের কচুয়ার সংযোগস্থলে হওয়ায় সেখানের রোগীরাও অনেক সময় এখানে আসেন। তাই সব সময়ই রোগীর চাপ থাকে।
বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বেশিরভাগ রোগীদেরই প্রথমে এখানে নিয়ে আসা হয়। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন সেবাগ্রহীতা আসেন হাজারেরও বেশি। কিন্তু সে অনুযায়ী নেই জনবল। তাই স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
৪ একর ৬৬.৮৭ আয়তনের হাসপাতালটির মূল ভবন দুইটি। বিভিন্ন পদে জনবল থাকার কথা ১৬৫টি। অথচ বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১০২ জন কর্মকর্তা। এক দশকের বেশি সময় শুন্য ৬৩ পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুন্য পদ রয়েছে স্বাস্থ্য সহকারী পদে। এতে ৫৮টি পদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ২২ জন। অথচ ৩৬টি শুন্য পদ নিয়েই এ হাসপাতালের অধীনে ২০ শয্যা বিশিষ্ট আরও ২টি হাসপাতাল পরিচালনা করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২০ শয্যার শহীদনগর ট্রমা সেন্টার ও ২০ শয্যা বিশিষ্ট দোনারচর হাসপাতাল। ৫০টি ক্যাটাগরির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একাধিক পদ শুন্য। শুধু তাই নয়, লোকবল সংকট থাকায় অনেক সময় আউটডোরে রোগীদেরও সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে । সকাল বেলা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক রোগী ও স্বজনদের ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়।
এছাড়াও হাসপাতালটির আঙ্গিনাসহ ভেতরের বেশিরভাগ অংশই অপরিচ্ছন্ন। বিশেষ করে মহাসড়ক সংলগ্ন হাসপাতালের অধিভুক্ত পুকুরটি দীর্ঘ দিন পরিষ্কার না করায় আশাপাশের এলাকা কলুষিত হচ্ছে। কারণ এ পুকুরটির চারপাশেই ময়লা-আবর্জনা। এর পুরো পানিই কালচে এবং এ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়। এছাড়াও গত এক দশকে অবকাঠামো খাতেও তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তবে এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দেয়া জরুরি বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গত দেড় দশকেও এ হাসপাতালে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাই হাসপাতালটির পরিবেশ স্যাঁতস্যাঁতে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে পূর্ব দিকে একটি ভবন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও কুমিল্লা-২ (দাউদকান্দি) আসনের এমপি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এরপর ৩বার নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন মেজর (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও একবার এমপি নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুঃখপ্রকাশ করে বলেন এ দুই এমপির আমলে অবকাঠামো উন্নয়ন তো দূরের কথা। তারা একবারের জন্য হাসপাতালটিতে পরিদর্শনেও আসেননি। তাই দীর্ঘ দিন অবহেলিত ছিলো এ হাসপাতালটি।
আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় পেন্নাই গ্রামের রেজাউল করিম বলেন- টিকিটের জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার ডাক্তারের দরজায়ও অনেক সময় লেগে যায়। এর প্রতিকার দাবি করেন।
স্থানীয় আঙ্গাউড়া গ্রাম থেকে আসা রমিজা বেগম বলেন- চিকিৎসাসেবা যাই হোক সামনের ময়লা পানির পুকুরটি হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করছে।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’র কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন- গৌরীপুর হাসপাতালের সামনের পুকুরটির ময়লা আবর্জনা হাসপাতাল ও রোগীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রিয়াদ মাহমুদ বলেন- হাসপাতালটি মহাসড়ক লাগোয়া হওয়ায় আশাপাশের উপজেলাগুলোর রোগীরাও এখানে চলে আসেন। মানবিক কারনে কাউকে তো ফেরত দেয়া যায় না। অথচ সে অর্থে আমাদের জনবল নেই।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন-সীমিত জনবল নিয়ে রোগীদের সেবা দিতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা কাউকে অবহেলা করি না। একান্ত অপারগ হলে অন্যত্র রেফার করি। তিনি শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ জনবলের শুন্য পদ পূরণের দাবি জানান।