শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : যানজট নিরসন ও বায়ুদূষণ রোধে দেশের মানুষ ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি আজ সকালে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদার, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এ কথা জানান। সড়ক পরিবহন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বকশ চৌধুরী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং অসহনীয় যানজট ও বায়ুদূষণ রোধে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী নির্বিশেষে সকলকে এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সেবায় উন্নতি করতে না পারলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানসহ সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি যানজটের স্থানগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন এবং বলেন, ড্রাইভার ও গাড়ির মালিকদের হয়রানি বন্ধে সচেষ্ট থাকতে হবে।
সড়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী উঠানামা বন্ধে সুনির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজধানীর স্কুলগুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল বাসের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিশ বছরের পুরনো ও ফিটনেসবিহীন বাসগুলো মে মাসের মধ্যে রাস্তা থেকে তুলে নিতে হবে এবং এ সংক্রান্ত কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণের সহায়তার প্রয়োজন হলে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পর্যালোচনা করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে কষ্ট দেওয়া নয়, ঢাকা শহরের যানজট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা। এক সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন না হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যত্রতত্র পার্কিং, সুনির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী ওঠানামা না করা, পুরনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন ঢাকা শহরে যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি স্বল্পকালীন সমাধান হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ে বা পিক আওয়ারগুলোতে একমুখী যানচলাচলের ব্যবস্থা, পার্কিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতার সঙ্গে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে ঢাকা শহরের বাস টার্মিনালগুলো এবং রেলওয়ে স্টেশন স্থানান্তরের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ফিটনেসবিহীন, রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী গাড়ী, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী বাসগুলো মালিকদের নিজ দায়িত্বে অপসারণ করার আহ্বান জানান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, বায়ু দূষণে ঢাকা শহরের মানুষ ভুগছে এবং এ সমস্যা সমাধানে আমাদের অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত করতে এবং ঢাকাবাসীকে একটি সুন্দর ও নিরাপদ শহর উপহার দিতে আমাদের সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি সড়কে যানজট নিরসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারগণকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন।
মো. খোদা বকশ চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরের যানজট মুক্ত করতে গাড়ী চালকদের ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে বিশদভাবে অবহিত করতে হবে, প্রয়োজনে বিদেশি প্রশিক্ষক এনে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বর্তমানে পরিচালিত ট্রিপ বেইজড ব্যবস্থার সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এসময় তিনি মহাসড়কে অটো রিক্সা নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।
জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অর্ন্তবর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারকে চালকদের জন্য পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন পুর্নবিবেচনা করতে হবে।
এসময় তিনি সরকারের নেওয়া সকল জনবান্ধব উদ্যোগকে সমর্থন জানাবেন বলে অঙ্গীকার করেন এবং সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।