শিরোনাম
রংপুর, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর চিনিকলটি চালুর সিদ্ধান্তের খবরে জনপদজুড়ে এখন প্রাণের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।
শ্যামপুর চিনিকল শুরুর পর থেকেই এলাকার কৃষক, শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষের জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল। আখচাষে এই অঞ্চলের ব্যাপক সমৃদ্ধি এনেছিল। তখন এখানে ৭ হাজারেরও বেশি শ্রমিক-কর্মচারী ও প্রান্তিক আখচাষির কর্মসংস্থান ছিল।
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন দেশের শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড় ও রংপুর চিনিকলের আখ মাড়াইয়ের কার্যক্রম স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু, শ্যামপুর মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হলে এলাকার সমৃদ্ধি থমকে যায়। ভুতুড়ে এক জনপদে পরিণত হয় মিল চত্বর। চিনিকল এলাকার কৃষি শ্রমিকরা কাজ হারান। বিপাকে পড়েন শত-শত কর্মচারী ও প্রান্তিক আখচাষি।
অবশেষে চার বছর পর সেই জট খুললো। চলতি মাসের ১৭ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে শ্যামপুর চিনিকল পুণরায় চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণায় আশার আলো দেখছেন কর্মরত কর্মচারী ও স্থানীয় আখচাষি, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ।
গত ১৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আফরোজা বেগম পারুলের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীন মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলসমূহে পুণরায় মাড়াই কার্যক্রম চালু করা হবে।
এ ঘোষণার পর শ্যামপুর চিনিকলটির আশপাশের এলাকার আখ চাষি, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। আখচাষে আগ্রহ বৃদ্ধি ও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এমন আশায় স্বপ্ন দেখছেন ওই এলাকার মানুষ।
আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘হঠকারী সিদ্ধান্তে মিল বন্ধ করায় আখ চাষিরা অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন। সময় মত চাষিদের উৎসাহ দিয়ে আখ রোপণ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মিল সংস্কার করা দরকার।
শ্যামপুর চিনিকল আখচাষি কল্যাণ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, ১২০ দিন মিল চালানোর জন্য আখের মজুত থাকা দরকার হয়। সে হিসেবে অন্তত ৬ থেকে ৭ হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মিল চালুর ঘোষণায় এলাকার মানুষ আনন্দিত ও উজ্জীবিত। এ জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।
শ্যামপুর সুগারমিল এমপ্লোয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, মিল চালুর ঘোষণায় আমরা অনেক খুশি। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে আখ রোপণ, মিল সংস্কার করতে হবে। বেশি দেরি হলে আখ না থাকার অজুহাতে মিলটি যথাসময়ে চালু করা সম্ভব হবে না।
শ্যামপুর সুগারমিলস লিমিটেডের ইনচার্জ মাসুদ সাদিক বাসসকে বলেন, আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত মিলটির সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যাতে আখ রোপণ শুরু হতে পারে এবং মিলটির উৎপাদন আবার সচল হতে পারে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বাসসকে জানান, শ্যামপুর চিনিকল চালুর ব্যাপারে ট্রাস্কফোর্স গঠন হয়েছে। আমরা আশবাদী শিগগিরই শিল্প মন্ত্রণালয় বন্ধ শ্যামপুর চিনিকল চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।
রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) মাসুমা আকতার জাহান বাসসকে বলেন, রংপুর চিনিকলসহ মাড়াই স্থগিতকৃত ছয়টি চিনিকল পুণরায় চালুর বিষয়টি আমিও শুনেছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এই চিনিকলটি চালু হলে অবশ্যই লাভজনক অবস্থায় উন্নীত হবে। কারণ এখানকার মাটি ও পরিবেশ আখচাষের জন্য খুবই উপযোগী।