শিরোনাম
ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগত যানবাহন প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক চলাচল নিশ্চিত করে এলাকার যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি শিক্ষা-বান্ধব ও শব্দ-দূষণ মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের একটি সাহসী উদ্যোগ।
গত ১৪ ডিসেম্বর প্রক্টর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুক্রবার, শনিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, বার্ন ইউনিট, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, পলাশী ও নীলক্ষেতের প্রবেশ পথগুলোতে সব ধরনের যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এছাড়া, সাধারণ কর্মদিবসে ক্যাম্পাসের ভেতরে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বহিরাগত যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শুধুমাত্র ঢাবি’র স্টিকারযুক্ত যানবাহন এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিডিয়া ও সরকারী গাড়িসহ জরুরি যানবাহনগুলোকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী জান্নাতুল ওয়াকিয়া বাসস’কে বলেন, ক্যাম্পাসে যানবাহন প্রবেশ সীমিত করার পদক্ষেপ বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি চমৎকার উদ্যোগ। পূর্ববর্তী প্রশাসন এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সাহসও পায়নি। তিনি তার পাঁচ বছরের ক্যাম্পাস জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ক্যাম্পাস এলাকায় বহিরাগত যানবাহন চলাচলের কারণে আমি বহুবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। এ কারণে কখনও কখনও রোকেয়া হল থেকে টিএসসিতে যেতে ২০ মিনিট সময় লাগত। তাছাড়া আমার শ্রবণে সমস্যা আছে। তাই আমি উচ্চ শব্দ সহ্য করতে পারি না।’ তিনি বলেন, টিএসসি মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে রাস্তা পার হওয়ার সময় রিকশা ও মোটরসাইকেলের সঙ্গে বেশ কয়েকবার তার জোরে ধাক্কা লাগে।
একই হলের বৃষ্টি নামের আরেক ছাত্রী একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ক্যাম্পাসে বাইরের যানবাহন প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগে ক্যাম্পাস এলাকায় রাস্তা পার হওয়া খুবই বিপজ্জনক ছিল। কিন্তু এখন আমি সহজেই রাস্তা পার হতে পারি।’
রুকাইয়া বিনতে মফিজ নামে আরেক ছাত্রী তার ফেসবুক টাইমলাইনে ক্যাম্পাস এলাকায় অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি ফেসবুকে ক্যাম্পাসে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে লিখেছেন, ‘১৯ নভেম্বর আমি ও আমার বন্ধু রিকশায় করে পরীক্ষার হলে যাচ্ছিলাম। আমরা যখন টিএসসি এলাকায় পৌঁছালাম, তখন একটি প্রাইভেট গাড়ি সজোরে আমাদের রিকশাকে ধাক্কা দিলে আমরা রিকশা থেকে পড়ে যাই। আমি এতে সামান্য আঘাত পাই। সৌভাগ্যবশত, সে সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র মনিরুজ্জামান বলেন, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা এ ক্যাম্পাসকে বাইরের যানবাহনগুলোর জন্য বাইপাস রোড হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিতে পারি না। এটা আমাদের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’ জনদুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এ সিদ্ধান্তের জন্য নগরবাসীর একটু কষ্ট হচ্ছে এবং আমি এর জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমরা প্রতিদিন ব্যবস্থাপনা উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা নিয়মিত বিশেষজ্ঞ ও ট্রাফিক প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করছি। তারা এ লক্ষ্যে সর্বোত্তম সহযোগিতা প্রদান করার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা অ্যাম্বুলেন্স ও প্রবেশের জন্য অনুমোদিত যানবাহনগুলোর ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য জরুরি রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা বিশেষজ্ঞ বা প্রশিক্ষিত নয়। ফলে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে। তবে এই সমস্যা অচিরেই দূর হয়ে যাবে। বুয়েটের জন্য আমরা আমাদের পলাশী সড়ক খুলে দিয়ে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছি। ঢাকা মহানগরীতে যানজট নতুন কোনো সমস্যা নয়। তবে জনগণ এর জন্য (যানজট) যেভাবে আমাদের অভিযুক্ত করছে, সেটা আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক।’
ডিএমপি’র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক, শাহবাগ জোন) মেহেদী হাসান শাকিল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক বন্ধ থাকায় শাহবাগ ও নীলক্ষেত এলাকায় আগের চেয়ে বেশি যানজট হচ্ছে। আগে সন্ধ্যা ৭টা বা সাড়ে ৭টার মধ্যে যানজট শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এখন রাত ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যানজট থাকে।’ তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু জায়গায় আমরা ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়েছি। কিন্তু অফিস টাইম যখন শেষ হয়, তখন রাস্তাটি বন্ধ থাকায়, যানজটটি বেশি হয়।’