শিরোনাম
চাঁদপুর, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪( বাসস): জেলার হাজীগঞ্জ ডাকাতিয়া নদী সংযুক্ত মিঠানিয়া খালটি সেচের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দখল, দূষণ ও পৌরসভার আবর্জনা ফেলার কারণে খালের মুখ অনেকটা ভরাট হয়ে আছে। যার ফলে খাল সংলগ্ন ১১টি সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং পতিত থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার একর ফসলি জমি। দ্রুত খালটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালের মুখ ভরাট থাকায় জলাবদ্ধতার পাশাপাশি গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির অভাবে বহুদিন ধরে মকিমাবাদ, খাটরা-বিলওয়াই, কাজিরগাঁও, দোয়ালিয়া ও মাতৈনসহ সেচ প্রকল্প আওতাধীন মাঠের অধিকাংশ স্থানে ফসলের জমি অনাবাদি হয়ে আছে। খালটি পুনরুদ্ধার ও খননে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে কৃষক, এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরা দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। খালটি সংস্কার হলে প্রায় ২০ হাজার কৃষক উপকৃত হবে। একই সঙ্গে বাড়বে ধানসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসলের উৎপাদন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মিঠানিয়া ব্রিজের নিচে এবং খালের দুই পাশে (উত্তর ও দক্ষিণ) পাশে পৌরসভার পরিচ্ছকর্মী ও আশপাশের এলাকার মানুষ আবর্জনা ফেলা এবং খালে কচুরিপানা ও নেপিয়ার ঘাসের কারণে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়াও খালের ওপরে থাকা ড্রেজার পাইপের জোড়া অংশের লিকেজ দিয়ে বালু পড়ে খালের মুখটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
কৃষক হোসেন মিজি, আলী আকবর, আব্দুল মালেক জানান, মিঠানিয়া ব্রিজ নির্মাণের সময় খালের ওপর বিকল্প সড়ক স্থাপন এবং ব্রিজ চালুর পর পরবর্তীতে ওই বিকল্প সড়কের মাটি ও বালু সরিয়ে না নেওয়ার কারণে সেচের পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে প্রায় সহস্রাধিক একর জমির চাষাবাদ হুমকি মুখে।
ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেল, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকাতিয়া নদী থেকে শুরু করে মিঠানিয়া খালটি হাজীগঞ্জ পৌরসভা হয়ে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ওপর দিয়ে বিভিন্ন খালের সাথে সংযুক্ত। এই খাল দিয়ে একসময় নৌকাযোগে উত্তরাঞ্চলের লোকজন চলাচল ছিল। বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। মাছ আহরণ করে অনেকেই জীবীকা নির্বাহ করতেন। এখন সেই খাল মৃত প্রায়।
এছাড়াও খালটির সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল ফসল উৎপাদনে। খালের পানি ব্যবহার করে পৌরসভাধীন ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাটরা বিলওয়াই ও মকিমাবাদ গ্রাম, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুদিয়া, মাতৈন, দোয়ালিয়া, মৈশাইদ, খাকবাড়িয়া, বাড্ডা, বাউড়া, শাহপুর, সুবিদপুর, মাড়ামূড়া ও কালচোঁ গ্রামের একাংশ প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফসল ফলাতেন। কিন্তু দিনে দিনে খালটি দূষণ ও দখলের কারণে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি প্রবাহ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
২০২৩ সালে এরাকার সেচ প্রকল্পের ম্যানেজারদের উদ্যোগে এবং তাদের নিজস্ব অর্থায়নে মিঠানিয়া ব্রিজের দুই পাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করে সেচের পানি প্রবাহে ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ বছর আবারও খালের মুখটি ভরাট হয়ে গেছে।
খাটরা-বিলওয়াই মাঠের সেচ ম্যানেজার আবুল হাসেম জানান, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকের কাছে কৃষকরা গিয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। আগামীতে হবে কিনা তাও জানি না।
এ বিষয়ে কথা হয় কৃষক হোসেন মিজি, আব্দুল মালেক, আলী আকবর, এমদাদুল হক, ইমান হোসেন নজরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন সাথে। তারা জানান, এই অঞ্চলের অধিকাংশ জমি এক ফসলি। অর্থাৎ বছরে একবার ফসল উৎপাদন হয়। এই ফসল দিয়ে তাদের পারিবারিক জীবিকা নির্বাহ ও গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয়। অথচ মিঠানিয়া খাল ও সেচের আওতাধীন ড্রেনের সংস্কার না করার কারণে তারা চাহিদা অনুযায়ী পানি পাচ্ছে না।
দোয়ালিয়া উজ্জ্বল মাঠের সেচ ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন জানান, মিঠানিয়া খালটি দ্রুত খননসহ সেচ প্রকল্পের ড্রেন পাকাকরণ প্রয়োজন। তা না-হলে কয়েক শতাধিক একর জমি অনাবাদি থাকবে। পাশাপাশি বর্ষাকালে এসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, পানির অভাবে অনাবাদি থাকলে তো কৃষকের ক্ষতিহবে। খালটি খননের বিষয়ে বিএডিসি’র প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। স্থায়ী কিছু করা যায় কিনা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) হাজীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মামুন রশিদ এই বিষয়ে বলেন, খালটির পানি প্রবাহে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এবং বিএডিসির উর্ধ্বত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, খালটি খননসহ টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া ।