শিরোনাম
রেজাউল করিম মানিক
রংপুর, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪(বাসস) : নানা ফসলে ভরে গেছে তিস্তার বুক। এটি যেন এখন আর নদী নয়, কৃষকের আবাদি জমি। তিস্তার বুকে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ফসলের ক্ষেত।
বালু মাটির ওপর পলি জমায় এ বছর ধান, গম, আলু, ভুট্টা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচসহ শীতকালীন অন্যান্য ফসলের চাষ হয়েছে। শীতকালীন সবজিতে ভরে গেছে তিস্তার বুক। ভালো ফলন পাবার আশায় চরের বুকে দিনরাত কাজ করছেন চাষীরা, পাচ্ছেন সাফল্যও।
এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে চরের কৃষককে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ায় চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
চাষীরা জানান, তিস্তার পানি আগেভাগে নেমে যাওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে চরের হাজারো কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তদারকির কারণে চরে ফসলও হচ্ছে দ্বিগুণ এমন অভিমত চরের কৃষকদের।
লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ১১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার বুকে অন্তত ১৫০ চরে চাষাবাদ হয়েছে। আগে যেসব চরে ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি সেসব চরেও এ বছর আবাদ হয়েছে। ফসলের আশানুরূপ ফলনও ঘরে তুলতে শুরু করেছেন তিস্তাপাড়ের কৃষকরা।
গত অক্টোবরে উজানে ভারতের সিকিমে তিস্তার বাঁধ ভাঙায় ভাটিতে বাংলাদেশে তিস্তার বুকে প্রচুর বালু জমেছে। এ কারণে বালুচরে এবার সব ধরনের ফসল হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিস্তাপাড়ের কৃষকরা। এমনটি জানিয়েছে কৃষি বিভাগও।
কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে ১১৫ কিলোমিটার তিস্তার বুকে প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমি আছে। গত বছরগুলোয় শুকনো মৌসুমে ২০-২২ হাজার হেক্টর জমিতে ফসলের চাষ হতো। এ বছর আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে।
ভুট্টা চাষ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ও ধান হয়েছে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও, আলু, গম, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, কুমড়াসহ শীতকালীন নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে।
তিস্তাপাড়ের কৃষকরা জানান, উজানে ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তার চুংথাং বাঁধ ভেঙে যায়। ওইদিন বিকেল নাগাদ বাংলাদেশে তিস্তার পানি অস্বাভাবিক বেড়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। বন্যার পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণে পলিমাটি আসে। তিস্তার বুকে বালুচরে এসব পলি জমা হয়ে জমিগুলোকে উর্বর করে তোলে।
এ বছর আগাম বন্যা পরিস্থিতি দেখা না দিলে তিস্তার চর থেকে আশানুরূপ ফসল তোলা যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। তারা বাম্পার ফলনে খুশি।
রংপুরের গংগাচড়া উপজেলায় তিস্তার চর ইচলি এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৬৫) বলেন, 'চরে ৩০ বিঘা জমি আছে। গত ২০ বছরে এসব জমিতে চাষাবাদ করতে পারিনি। জমিতে শুধু বালু আর বালু। এ বছর সব জমিতে ফসল হয়েছে। আলু তুলতে শুরু করেছি। প্রতি শতাংশ জমিতে গড়ে ৪৫ কেজি আলু পেয়েছি। সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি।'
তিস্তার চর ছালাপাকের কৃষক রফিজ উদ্দিন মন্ডল (৭০) বলেন, 'তিস্তার কোনো চরই এ বছর ফাঁকা পড়ে নাই। সব চরে চাষাবাদ হয়েছে। চরের মাটিতে প্রচুর পলি জমেছে। অতীতে তিস্তার অধিকাংশ চর ফাঁকা পড়ে থাকতো। বালুর কারণে ফসল ফলাতে পারেননি। এ বছর পলি জমায় তা চরের কৃষকদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।'
কাউনিয়া উপজেলার চর মধুপুর এলাকার কৃষক আমজাদ আলী বলেন, দেড় বিঘা জমিতে মরিচ আবাদ করেছি, বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেলে আর পিছনে তাকাতে হবে না। চর নোহালীর চাষীমফিজুল বলেন, চরে তিনবিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছে। আলু তোলার পর ওই জমিতে ভুট্রা লাগিয়েছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, 'গত বছরগুলোয় শুকনো মৌসুমে তিস্তার চরাঞ্চলে যে পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল, এ বছর হয়েছে দ্বিগুণের বেশি জমিতে। চরে পলি জমায় জমিগুলো চাষযোগ্য হয়েছে।'
'বাম্পার উৎপাদন হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এসব জমিতে সার ও কীটনাশক দিতে হয় না। কম খরচে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন।