শিরোনাম
॥ আল-আমিন শাহরিয়ার ॥
ভোলা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : ভোলা-বরিশাল, ইলশা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে, যেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন, নিরাপত্তা সরঞ্জামহীন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের দ্বারা পরিচালিত। এ কারণে প্রায়ই ঘটে যাচ্ছে ছোট-বড় বহু দুর্ঘটনা। যার মধ্যে প্রাণহানির ঘটনাও রয়েছে ব্যাপক। গত ৫ ডিসেম্বর ভোলার কালাবাদর নদীতে একটি দুর্ঘটনায় চালকসহ চারজন নিহত হন এবং আরো এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। এ ঘটনার পর এখানকার প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ঘটনার পর বিআইডাব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে পাঁচ দিনের জন্য স্পীডবোট চলাচল বন্ধ রেখেছিল।
এর আগে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি রাতে দুটি স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষক ও তার সন্তান নিহত হন। ওই দু'টি দুর্ঘটনায় চালকদের ভুল ছিল বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। ২০১৬ সালের দুর্ঘটনার পর রাতের বেলায় স্পীডবোট চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন এবং যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিলো।
তবে প্রথম কিছুদিন এই নিয়মটি মানা হলেও পরে তা ভাঙতে শুরু করে স্পিডবোট মালিকরা। সর্বশেষ, গত ৫ ডিসেম্বর দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার পর প্রশাসন ফের এসব রুটে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে চলতি ১১ ডিসেম্বর থেকে নতুন নিয়মে বৈধ কাগজপত্রসহ স্পীডবোট চলাচল শুরু করা হলেও অসাধু দুর্বৃত্তরা তাদের স্বার্থে এসব নিয়মের ধার ধারে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট থেকে ১০ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় দূর্ঘটনাকবলিত ওই স্পিডবোট। তবে বোটের চালক ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক মো. আলামিন (১৮), যিনি স্থানীয়দের মতে, ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী। বোর্ডটি চলার সময় একটি বালু বোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে উল্টে যায়। এতে চালকসহ চারজন নদীতে পড়ে যান, যার মধ্যে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এক যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সূত্রমতে, ভোলা-বরিশাল নৌ-রুটে প্রায় ৬০-৭০টি স্পিডবোট চলাচল করে, যার মধ্যে ৪০-৪২টি বৈধ রুট পারমিট পেয়ে চলাচল করছে আর ভোলার ইলিশা উপশহর হতে লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটে চলে বিধিবহির্ভূত অর্ধশতাধিক স্পিডবোট।
তবে বেশিরভাগ সময় সনদধারী চালকরা স্পিডবোট চালান না, কারণ তাদের বেতন খুবই কম এবং নিয়মিত সিরিয়াল পাওয়া যায় না। এর ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরা কাজ করছেন বেশী। স্থানীয় যাত্রীরা জানান, সময় বাঁচাতে তারা স্পিডবোট ব্যবহার করেন, কিন্তু একেবারেই নিরাপদ পরিবেশ পাওয়া যায় না। অধিকাংশ বোট চালক অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
বোট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রায়ই রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সিরিয়াল পাচ্ছেন না এবং এটি তাদের জন্য লাভজনক নয়। চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বরের দুর্ঘটনার পর বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসন নতুন নিয়মে স্পিডবোট চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কত দিন এ নিয়মটি কার্যকর থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মালিকদের মধ্যে।
এ ব্যাপারে বিআইডাব্লিউটিএর ভোলা বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম বাসস'কে বলেন, এ ঘটনার পর আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোনো অবৈধ স্পিডবোট চলতে দেয়া হবে না এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের দিয়ে তা চালানো যাবে না।