বাসস
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৬

জনগণের রোষানল থেকে বাঁচতে পুলিশকে ফোন ব্যাংক ডাকাতি চেষ্টার আসামি লিয়নের


ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ (বাসস) : খেলনা পিস্তলের ভয় দেখিয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার রূপালী ব্যাংকের চুলকুটিয়া জিনজিরা শাখার থাকা মানুষদের জিম্মি করেন লিয়ন মোল্লা ওরফে নিরব (২১),আরাফাত (১৬) ও  সিফাত (১৬)। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা বাইরে জানাজানি হয়ে গেলে জনগণের মাইর থেকে বাঁচার জন্য আসামি লিয়ন পুলিশকে ফোন করেন। তাদের যেন কোন ক্ষতি না হয় বার বার পুলিশকে অনুরোধ করেন লিয়ন। পুলিশ আসার পর আসামিরা টাকাসহ আত্মসমর্পণ করেন। দুই আসামির দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতি চেষ্টার আসামি লিয়নসহ তিনজন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ওই ঘটনায় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তারেক মামুন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন ২০ ডিসেম্বর লিয়ন, আরাফাত ও সিফাতকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর আরাফাত ও  সিফাত সেচ্ছায় ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হিরন কুমার বিশ্বাস।

আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর আরাফাত ও সিফাত কিশোর হওয়ায় তাদের গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

অপর দিকে মামলার মুল রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামি লিয়নকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদ তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ডাকাতি করলে সিয়াম ও আরাফাতকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়ার প্রস্তাব দেন লিয়ন।

আসামি সিয়াম তার দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, 'আমি ও আরাফাত বাল্যবন্ধু। আমাকে ও আরাফাতকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়ার কথা বলে ব্যাংক ডাকাতি করার প্রস্তাব দেয় আসামি লিয়ন। প্রথমে আমি ও আরাফাত রাজি হইনি। পরে লিয়নের কথায় রাজি হয়ে যাই। আমরা প্রথমে কদমতলীর দ্বীন ফার্নিচারের দ্বিতীয় তলায় থাকা ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করি। পরে এটা বাদ দিয়ে চুনকটিয়ার রূপালী ব্যাংক ডাকাতি করার পরিকল্পনা করি। ব্যাংক ডাকাতির জন্য লিয়ন আগে থেকে তালা কিনে রাখেন।'

জবানবন্দিতে সিয়াম আরো বলেন, 'পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি, আরাফাত ও লিয়ন রূপালী ব্যাংকের ভিতরে ঢুকে গেলে তালা লাগিয়ে দেয় লিয়ন। সর্বপ্রথম লিয়ন হাতে ব্যান্ডেজ থাকা একজন লোকের দিকে খেলনা বন্দুক তাক করেন।এই সময় আমি ও আরাফাত খেলনার পিস্তল দিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ব্যাংকের ভিতরে থাকা সবাইকে এক জায়গায় বসিয়ে রাখি। লিয়ন ব্যাংকের কাউন্টার থেকে টাকা ব্যাগে ঢুকাতে থাকে। এরমধ্যে বাইরে ডাকাতির ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে আমরা ভয় পেতে থাকি। আমি ও আরাফাত জিম্মিদের খেলনার পিস্তল তাক করে থাকি। লিয়ন বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিতে থাকে। আমি ও লিয়ন জনগনের মার থেকে বাঁচানের জন্য পুলিশকে ফোন করি। আত্মসমর্পনের সময় লিয়নের ব্যাগে ১৫ লাখ, লিয়নের পকেটে দুই লাখ ও আরাফাতের পকেটে একলাখ টাকা ছিল। পুলিশ টাকাসহ আমাদের গ্রেফতার করে।'

আসামি আরাফাত তার জবানবন্দিতে বলেন, 'আসামি লিয়নের সাঙ্গে আমি ও সিফাতের পরিচয় হয় ঘটনার ১০/১২ দিন আগে। পরিচয় হওয়ার পর আমাদের প্রথমে ফুটবল খেলা নিয়ে কথা হতো।পরিচয় হওয়ার ৪/৫ দিন পর রাত ৮ টার দিকে আমার বাড়ীর সামনে চায়ের দোকানে আমি ও সিফাতকে ব্যাংক ডাকাতি করার কথা বলে লিয়ন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা বৃহস্পতিবার  (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটে রুপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় প্রবেশ করে নিরাপত্তা রক্ষীকে চুপচাপ পিছনে হাত দিয়া হাটু গেড়ে বসে পড়তে বলে। এসময় কিশোর মো. আরাফাত ও মো. সিফাত ব্যাংকে প্রবেশ করে। ব্যাংকে থাকা অন্যান্য গ্রাহক ও স্টাফদেরকে পিস্তল দেখিয়া বলে, 'কেউ চিল্লাচিল্লি করবি না, সবাই আমাদের সামনে এসে পিছনে হাত রেখে হাটুগেড়ে বসে পড়, মাথা নিচের দিকে করে রাখ, আমরা কারো ক্ষতি চাইনা, আমাদের কাজে কেউ বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে না, আমাদের কাজ শেষ করে চলে যাব, কেউ চালাকি করলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলব'। তখন ব্যাংকের অন্যান্য স্টাফ ও গ্রাহকরা জীবনের ভয়ে আসামীদের সামনে এসে পিছনে হাত দিয়া হাটুগেড়ে বসে পড়েন। এরপর ব্যাংকের অফিসার মোহাব্বত হোসেন কৌশলে পিছনের গার্ড রুমে ঢুকে পড়ে ব্যাংকের ম্যানেজার ও বাসার কেয়ারটেকারকে জানান।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামীরা প্রথমে ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার তার কেটে ফেলে। স্টীলের পাইপ দ্বারা ব্যাংকের সার্ভারের হাব ভেঙে ফেলে। ব্যাংকের সকলের মোবাইল নিয়ে নেয় এবং ব্যাংকের ক্যাশে থাকা ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে আসামীরা ভল্টের চাবি চায়। ব্যাংক ম্যানেজারের অনুপস্থিতিতে চাবী না পাওয়ায় আসামীরা ১৮ লাখ টাকাসহ পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের আটক করেন।