বাসস
  ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৩২

সাতক্ষীরার দেবহাটায় গড়ে উঠেছে বালা তৈরির কারখানা

আসাদুজ্জামান,

সাতক্ষীরা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে দেবহাটা উপজেলার উত্তর সখিপুর গ্রাম। সারা গ্রাম জুড়ে প্রতিদিন সকাল থেকেই খট খট শব্দে মুখর হয়ে ওঠে। এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট বালা (রুলি) তৈরির কারখানা। আর এ বালা তৈরির কাজ করে গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবার এখন সচ্ছল।

গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই পাকা দালান। বাড়ির সঙ্গেই রয়েছে ছোট ছোট কারখানা। সকাল হলেই এখানকার কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তাদের কেউ ছোট হাতুড়ি দিয়ে পিতলের পাত পিটিয়ে সাইজ করছেন, কেউ সেটিকে গোলাকার পাইপে পরিণত করছেন, আবার কেউ সেটিতে গালা ভরে গোলাকার বালা তৈরি করছেন। আর বাড়ি বাড়ি যেয়ে এসব বালা সংগ্রহ করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বালার উপর নান্দনিক সব ডিজাইনের কারণে এখানকার কারিগরদের  সুনাম রয়েছে। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এসব ডিজাইন করা বালার চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। খোদাই করা নকশার এসব বালা বিক্রি করা হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি মার্কেটে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, এ গ্রাম থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বালা বেচাকেনা হয়।

ঘরে ঘরে বালা তৈরির এ কাজ করার কারণে গ্রামটি এখন ‘বালা গ্রাম’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের জীবন জীবিকা এখন এ কাজের উপর নির্ভরশীল। এখানকার তৈরি করা বালা যায় রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে। সেখান থেকে রং ও পালিশ শেষে এগুলো পৌঁছে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গ্রামের মানুষদের মতে, বালা তৈরির কারণে বেকারত্ব এখন অনেকটাই দূর হয়েছে। গৃহিণীরাও এ কাজে যুক্ত হয়ে সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা এনেছেন।

স্থানীয় গৃহবধূ শিউলি বেগম জানান, নিজের ঘরে বসেই কাজ করতে পারছি। এতে সংসারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি আমাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।

বালা তৈরির কারিগর মো. রাসেল জানান, আমি প্রতিদিন সকাল থেকে কাজ শুরু করে দুপুর ৩টার মধ্যে ৮-১০ জোড়া বালায় নকশা করতে পারি। এতে আমি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পায়।

গ্রামের এ পরিবর্তনের আরেক কারিগর মিজানুর রহমান জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি এ গ্রামে বালা তৈরির কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার প্রচেষ্টা পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এখন এটি গ্রামের মানুষের অন্যতম প্রধান পেশা।

পাইকারি বালা (রুলি) ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, তামার শিট কেটে সেটাকে বালার আকৃতি দিয়ে গালা, ধুনো, ইটের কণা ও সোহাগার সংমিশ্রণে তৈরি গালা দিয়ে ফাঁপা অংশ ভরাট করা হয়। এরপর হাতের নকশাসহ কয়েক দফা কাজ শেষে একেক জোড়া বালা স্বর্ণের রং করে বাজারে বিক্রি করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে আমরা এখান থেকে সরাসরি ঢাকার পাইকারি মার্কেটে বিক্রি করি। তিনি বলেন, পণ্য ঢাকায় পাঠানোর সময় সীমান্ত এলাকা হওয়ায় অনেক সময়  বিজিবি ও পুলিশ এটাকে ভারতীয় পণ্য মনে করে আটক করেন। এতে আমাদের নানাভাবে হয়রানি হতে হয়। এজন্য বর্তমানে এখানে তৈরিকরা বালাগুলো ডিজাইনের পর রং না করেই ঢাকাতে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে আমরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরার উপ-ব্যবস্থাপক গৌরব দাস জানান, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় বালা শিল্প নিয়ে কাজ করছেন বেশ কিছু উদ্যোক্তা। সময় উপযোগী একটি দারুণ উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। স্বর্ণের দাম যেহেতু বেশি সেই জায়গাটি ইমিটেশন গহনা দখল করে আছে। এতে এ উদ্যোক্তারা নিজেরাই যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। বিসিক এধরনের উদ্যোক্তাদের  সঙ্গে নিয়েই কাজ করে। খুব দ্রুত ওই গ্রামটি ভিজিট করা হবে এবং শিল্প নিবন্ধনসহ যে কার্যক্রম গুলো রয়েছে এর সঙ্গে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা হবে।