শিরোনাম
দিলরুবা খাতুন,
মেহেরপুর, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জুতা আবিস্কারের আগে মেহেরপুরে জনপ্রিয় পাদুকা ছিলো খড়ম।
খড়ম এমন পাদুকা যা তৈরি হতো কাঠ দিয়ে। এটি পায়ের বুড়া আঙুলের ফাঁকে পড়তে হয়।
খড়মের ব্যবহার এখনকার যুগে কমে গেলেও এককালে মনীষী সাধু এবং আলেম ব্যক্তিগণ খড়ম ব্যবহার করতেন।
জুতা সহজপ্রাপ্যতার কারণে খড়ম হারিয়ে গেলেও ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন কিছু সাধু-সন্ন্যাসী। এখনো তাদের অনেকের পায়ে খড়ম দেখা যায়।
ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কাঠের পাদুকা বা খড়ম।
মসজিদের ইমাম, ও স্থানীয় ভূ-স্বামীরা পরতেন খড়ম। এখন এ ধরনের পাদুকার প্রচলন দেখা না গেলেও মেহেরপুর অঞ্চলের ইটভাটাগুলোর শ্রমিকরা টিকিয়ে রেখেছে ঐতিহ্যের খড়ম। ভাটা শ্রমিকদের তপ্ত ইট ও ইটপোড়ানো কাঠের আগুনের মধ্যে কাজ করতে হয় বলেই তারা কাঠের খড়ম ব্যবহার করেন।
বর্তমানে চামড়া কিংবা ফোম জুতো তৈরির কাজে ব্যবহৃত হলেও অতীতে এ দুই উপকরণ মোটেই সহজ লভ্য ছিল না। বরং কাঠের প্রাচুর্য ছিল গোটা বিশ্বে।
স্বাভাবিকভাবেই কাঠই বেছে নেওয়া হয় জুতো তৈরির প্রধানতম উপকরণ হিসেবে।
মেহেরপুর জেলা শহরের কাথুলী সড়কে পাদুকা কারিগর সাধন দাসকে খড়ম তৈরি করতে দেখা যায়।
তিনি জানান আগে কাঠের কারিগররা খড়ম বানাতেন। এখন আমরা কাঠের সুখতলা তৈরি করে তারপরও টায়ারের বেল্ট লাগিয়ে খড়ম বানানোর সহজ পদ্ধতিতে।
যা ভাটা শ্রমিকরা ব্যবহার করেন। সাধন আরও জানান, শীত আসলেই ইটভাটাতে ইটপোড়ানো শুরু হয়।
এ সময় ভাটা শ্রমিকরা তাকে খড়ম বানাতে অর্ডর করে। রাবার বা চামড়ার পাদুকা গলে যায় আগুনের তাপে।
কিন্তু কাঠের পাদুকাতে তাপ প্রতিরোধ করে।
ইট ভাটা শ্রমিক সেন্টু মিয়া বলেন-ভাটায় কাজ করায় জুতা, সেন্ডেল বেশিদিন টেকে না। রাবার বা চামড়ার পাদুকা গলে যায় আগুনের তাপে। কিন্তু খড়ম অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। তাই ভাটায় কাজ করার জন্য তিনি খড়ম ব্যবহার করেন।
শালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাশ্বত নিপ্পন চক্রবর্তী বলেন, আমার দাদু ডা. গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী ৮০ দশক পর্যন্ত খড়ম পরেছেন। পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি জুতো ব্রাক্ষণ্যবাদীদের কাছে অস্পৃশ্য বলে বিবেচিত হতো।
সেই অর্থে কাঠই পবিত্র হিসেবে গণ্য করে খড়ম পরতেন। বাবা নাগরা জুতা পরতেন। আমি চামড়ার জুতা পড়ি। দাদাদের সময় জুতো হিসেবে বেছে নিতেন খড়ম।
এখন তো জুতো তৈরিতে প্রচুুর পরিমানে গরুর চামড়া ব্যবহার করা হয়। আর এ কারণে চামড়ার তৈরি জুতো এখনও এড়িয়ে চলেন সাধু-সন্ন্যাসীরাসহ আমাদের অনেকেই।