বাসস
  ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪১

পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখরিত তিস্তা

রেজাউল করিম মানিক

রংপুর, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। বিশেষ করে তিস্তাপাড়ের মানুষগুলো শীতে কাহিল ।

আর এরই মধ্যে দুর্লভ পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখরিত তিস্তা। বালুময় তিস্তার চরগুলো পরিযায়ী পাখিতে মুখরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে বাড়ছে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীদের ভিড়।

নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্ট থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার তিস্তা নদী এবং নদীর চরে এখন বিচরণ করছে অগণিত পরিযায়ী পাখি। এর কোনোটা হাজার মাইল দূর থেকে এসে মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিস্তা এখন পরিযায়ী পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

শীতের শুরুতেই নদীর পাড়ে পরিযায়ী পাখির দল বেঁধে ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর ডুব সাঁতারের সুন্দর মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ মাঝি, কৃষাণ-কৃষাণী ও স্থানীয়রা। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পিছিয়ে নেই দর্শনার্থীসহ শৌখিন আলোকচিত্রীরাও।

জানা গেছে, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর এপার-ওপার। এবারও পাখি আসছে। এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো। নদীতে শামুক, জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে পাখিগুলো।

তিস্তাকে যেন পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা যায় এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।

সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাদাখ থেকে এসব পাখি আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস, ছোট কান প্যাঁচা, লম্বা পা তিসাবাজ, জিরিয়া, টিটি, মনকান্ড, চখাচখিসহ ৫০ থেকে ৫৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে তিস্তায়।

আলোকচিত্রী রানা মাসুদ বাসস কে বলেন, প্রতি বছরই দুর্লভ পাখি দেখতে এবং ছবি তুলতে তিস্তাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাই। এবার তিস্তায় গত বছরের চেয়ে বেশি পাখির আগমন ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আগে ভোর হতেই পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙতো বলেই কবির কবিতায় পাখির কথা উঠে এসেছে। কিন্তু আমরা আমাদের নদী, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি। পাখির বাসযোগ্য স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের জন্য আমাদের নদীমাতৃক এ দেশের সৌন্দর্য যেমন মন কাড়ে, তেমনি কষ্টও লাগে যখন দেখি শিকারির হাতে বন্দী পাখি।

তিস্তায় দুর্লভ পাখির বিচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিস্তায় কমবেশি পরিযায়ী পাখি আসে। প্রতি বছরের মতো এবারও আসছে। তবে এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে তিস্তায়। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি পাখিদের অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো।

চর জেগে তিস্তায় এখন তেমন পানি নেই। কোথাও হাঁটু পানি কোথাও বা কোমর পর্যন্ত। তবে বালুময় তিস্তার কোনো কোনো জায়গায় পাড়ভাঙা ক্ষতচিহ্ন যেমন অসহায়ত্ব জানান দিচ্ছে, তেমনি কোথাও কোথাও সামান্য পানিতে নৌকার মাঝি ছোটাছুটিও নজর কাড়ছে পাখিপ্রেমীদের। নৌকায় চড়ে স্থানীয় আব্দুর রহিম, নির্মল রায়, আরিফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন যুবক ঘুরে ঘুরে পাখির বিচরণ দেখে মুগ্ধ।

এ যুবকেরা বলেন, অসচেতনতার অভাবে সামান্য স্বার্থের কারণে বা শখের কারণে অনেকেই শীতের এ মৌসুমে পরিযায়ী পাখিদের শিকার করে থাকেন। এতে করে আমরাই আমাদের এ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করছি। নদী ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে।

আমাদের দেশ ক্রমেই অতিথি পাখির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। শুধু আইন দিয়েই পাখি শিকার বন্ধ করা যাবে না। সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বাসস কে বলেন, তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটেছে । এসব অতিথি পাখি যেন কেউই মারতে না পারে সেজন্য প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে ।