বাসস
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:২৬

আওয়ামী লীগ জাতিকে এনেস্থেসিয়া দিয়ে বেহুঁশ করার চেষ্টা করেছে: ডা. শফিকুর রহমান

সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় ডা. শফিকুর রহমান

নীলফামারী, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার কথা বলে এ জাতিকে এনেস্থেসিয়া দিয়ে বেহুঁশ করার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘তোমরা এই চেতনা নিয়ে ঘুমাও, আমরা শোষণ করি। আমরা তোমাদের খাবলে-খুবলে শেষ করি। ইন্ডাস্ট্রি মিল কর্পোরেশন যা আছে সব শেষ করি। শেষ করে দেশেও রাখেনি। সব বিদেশে নিয়ে গেছে। ২৬ লক্ষ কোটি টাকা সাড়ে ১৫ বছরে তারা বাংলাদেশ থেকে চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে।’

আজ রোববার রাত ৮টার দিকে জেলার সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ’২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত একই কাজ দফায় দফায় তাদের (আওয়ামী লীগ) দ্বারা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা বরাবরই এর দায় এদেশের ইসলামপন্থি জনগণের ওপর ফেলে দেয়। এটা তাদের অভ্যাস। কারণ এই দলটি যা বলে তা করে না। এদের চরিত্র হচ্ছে এদের কথার সাথে কাজ বিপরীতমুখী। আবার একটা দেশকে জাতিকে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি বানিয়ে বিভক্তি করে রেখেছে। ঘোষণা দিয়েছি এদেশকে আর ভাগ করতে দেবো না। আমরা সব দল, সব ধর্ম একত্রিত মিলেমিশে দেশটাকে ফুলের বাগান বানাতে চাই।’

ওই অপশক্তি সমাজে বিভক্তি লাগিয়ে রেখেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র হলেও ষষ্ঠ জনবহুল দেশ এটি। এখানে আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায় মিলেমিশে বসবাস করছি। তবে একটি অপশক্তি বাংলাদেশকে, সমাজকে ভেঙে টুকরা টুকরা করে। সমাজে বিশৃঙ্খলা  লাগিয়ে সমাজটাকে শোষণ করেছিল। এই অপশক্তিই সর্বশেষ সাড়ে পনেরো বছর ক্ষমতায় ছিল। তারাই সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মারামারি লাগিয়ে রেখেছিল। আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকি। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কোনো শক্তি ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।’

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাড়ে ১৫ বছরের লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লাগাতার আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যুদ্ধ করেছি, লড়াই করেছি। কিন্তু শেষ ফলাফলটা আমাদের এনে দিয়েছে এদেশের যুব সমাজ, ছাত্র-ছাত্রীরা, তরুণ-তরুণীরা। আমরা তাদের ভালোবেসে সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা জানাই, স্যালুট দেই। তাদের জন্য আমরা গর্বিত। তারা আমাদের সন্তান।’

ভোটার হওয়ার জন্য সরকার ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত চিন্তা করছে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘১৪, ১৬, ১৭ বছর বয়সের আমাদের এই সন্তানেরা যদি যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, আমার কি একটা ভোটের উপহার তাদের হাতে তুলে দিতে পারি না। এদের কথা শুনলে তো আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা।’

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অপশাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা যখন তখন মানুষকে বেইজ্জত করেছে। এদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবীদকে বেইজ্জত করেছে, খুন করেছে। তারা বিরোধীদলের নেতা কর্মীকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে ফেলেছে। আবার কাউকে গুম করে। এখন পর্যন্ত তাদের পরিবার জানে না, তাদের বুকের ধন বেঁচে আছে কিনা। তারা আয়নাঘর তৈরি করেছে। তারা আমাদের জনগণের মুখের অধিকারটা কেড়ে নিয়েছে। এদেশটা আমাদের সবার। আমরা সবগুলো দল, সবগুলা ধর্ম একত্রিত হয়ে বাংলাদেশকে একটি ফুলের বাগান হিসেবে সাজাবো ইনশাআল্লাহ। যে দেশে বৈষম্য থাকবে না।’

সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতে আমির মাওলানা আব্দুল মুনতাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস্ সাত্তার, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ড. খায়রুল আনাম, সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. মাজহারুল ইসলাম, শহর শাখার আমির শরফুদ্দিন খান, সেক্রেটারি মো. ওয়াজেদ আলী প্রমুখ।