শিরোনাম
ঝিনাইদহ, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বিস্তীর্ণ মাঠের পরে নিবিড় পল্লী আশুরহাট। ঘন জঙ্গল আর গাছগাছালিতে ঠাসা একটি নিভৃত গ্রাম। গাছে গাছে শামুকভাঙা/শামুকখোল প্রজাতির পাখির কলকাকলী।
শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ায় মগডালে থাকা থোকা থোকা পাখির বাসা চোখে পড়ছে স্পষ্ট। মা পাখিগুলো পরম মমতায় বাচ্চা নিয়ে বসে আছে বাসায়। গাছগুলো বিশালাকৃতির হওয়ায় ক্যামেরার লেন্সে পাখির চিত্র তুলে আনা দুষ্কর। তবুও প্রতিনিয়ত মানুষের ভিড় পাখির গ্রাম আশুরহাটে। পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনতে দর্শনার্থীদের আগ্রহের শেষ নেই।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামের বর্তমান চিত্র এমনই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়ক ধরে গোয়ালপাড়া বাজারের খানিক আগে বিজয়পুর সড়কে দর্শনার্থীদের ছোট্ট জটলা। গন্তব্য আশুরহাট। বিজয়পুর বাজার পেরিয়ে দিগন্ত জোড়া মাঠ। মাঠের পরেই পাখির গ্রাম খ্যাত আশুরহাট। গাছে গাছে শত শত পাখির বাসা। উচ্চ শব্দ হলেই ডানা ঝাপটে দলবেঁধে উড়ে যাচ্ছে শামুকভাঙা/শামুকখোল পাখির ঝাঁক।
পড়ন্ত বিকেলে বাগানের ওপরে চক্রাকারে ঘোরাঘুরি করে পাখিরা। এরপর পাখিগুলো উড়ে গিয়ে বসে গাছের ডালে ডালে। কিচিরমিচির কলকাকলীতে মুখর হয়ে উঠেছে চারপাশ। তবে আগের চেয়ে পাখির সংখ্যা কমে গেছেবলে দাবি স্থানীয়দের।
আশুরহাট গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৬০) বাসস'কে জানান, বহু বছর ধরেই আশুরহাট গ্রামের বাগানগুলোতে পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। শীতকালে পাখি কিছুটা কমে গেলেও আষাঢ় মাসে পাখির সংখ্যা বেশি থাকে। দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় শামুকখোল/শামুকভাঙা পাখি এখনো আশুরহাট গ্রামে দেখা যায়।
একই গ্রামের শ্যামলী রানী জানান, আগে পাখি বেশি ছিল। দিনদিন পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ পাখির সুরক্ষা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও রাতের বেলা উৎপাত হয় বলে শুনেছি।
পাখির সুরক্ষায় আশুরহাট গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে একটি সমিতি। আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, রাতের আঁধারে কিছু দুষ্কৃতিকারী পাখি শিকারের চেষ্টা করে। গ্রামের মানুষ সজাগ থাকায় তারা পাখি ধরতে পারে না।
স্থানীয়দের দাবি, আশুরহাট গ্রামকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সরকারি ভাবে নজরদারি বাড়ানো উচিত।
খুলনা বিভাগীয় বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্য বাসস'কে বলেন, আশুরহাট গ্রামে দেশীয় 'শামুকখোল' বা শামুকভাঙা প্রজাতির পাখির বসবাস। কেবল একটি প্রজাতির পাখিই সেখানে কলোনি গড়েছে। শামুকখোল পাখি দলগতভাবে বসবাস করে থাকে। শীতকালে মা পাখিরা বাচ্চা নিয়ে বাসায় থাকে। বাকিরা খাবারের সন্ধানে দূরদূরান্তে চলে যায়। শীতের শেষে পাখির সংখ্যা বেড়ে যাবে।
তিনি জানান, আশুরহাট গ্রামের একটি অংশকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার চেষ্টা চলছে। স্থানীয় ও বাগানের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
শৈলকূপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস বাসস'কে বলেন, আশুরহাট গ্রামের একটি অংশকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার বিষয়ে কাজ চলছে। খুলনা বিভাগীয় বন বিভাগ সেটি দেখাশোনা করছে। পাখির সুরক্ষায় স্থানীয় গ্রামবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সার্বিক তদারকি অব্যাহত রেখেছে।