বাসস
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০০

সরকারের আর্থিক সহায়তায় স্বাবলম্বী সুনামগঞ্জের ১০ কৃষক

সবজি চাষী শাহ আলমের পলি শেড নেট হাউজ। ছবি: বাসস

সুনামগঞ্জ, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আর্থিক সহায়তায় পলি শেড তৈরীর মাধ্যমে সবজি চারা উৎপাদন করে এখন ১০ জন কৃষক স্বাবলম্বী। 

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের মাজাইল গ্রামের বাসিন্দা সবজি চাষী শাহ আলম। তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক। সংসারের বাবা, মা, স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তানসহ ৭ সদস্যের আদর্শ পরিবার তার। 

গ্রামের পাশের মাঠে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ১০ শতক জমিতে একটি পলিশেড নেট হাউজ তৈরী করে দিয়েছে। গত আগস্টে এ পলিশেড নেট হাউজ তৈরী করা হয়। এর পর এই নেট হাউজে শাহ আলম বিভিন্ন ধরনের সবজি বীজ বপন করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি সবজি চারা বিক্রি শুরু করেন। এ পর্যন্ত তিনি এই শেডে উৎপাদিত অন্তত ২২ লাখ চারা বিক্রি করেছেন। 

চলতি মাসের মধ্যে আরও ৮ থেকে ১০ লাখ চারা বিক্রি করতে পারবেন। শাহ আলম বাসসকে জানান, সবজি বীজ বপনরে অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই চারা বিক্রি করা যায়। 

শাহ আলম আরও জানান, এবছর তিনি ৪ লাখ টমেটো চারা, ২ লাখ মরিছের চারা, ১৪ হাজার পেঁপে চারা, ২০ হাজার লাউ চারা, ৬০ হাজার ফুল কপির চারা, ৬০ হাজার বেগুনের চারাসহ আরও বিভিন্ন জাতের সবজি চারা বিক্রি করেছেন।

প্রতিটি টমেটো চারা বিক্রি করেছেন ৩ টাকা করে, মরিছের চারা বিক্রি করেছেন আড়াই থেকে ৩ টাকা করে, পেঁপে চারা বিক্রি করেছেন ২৫ টাকা করে, লাউের চারা ও ফুল কপি চারা বিক্রি করেছেন দেড় থেকে ২ টাকা করে, ৬০ হাজার বেগুনের চারাসহ আরও বিভিন্ন জাতের চারা ৮ থেকে ১০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।

শাহ আলম আরও জানান, পলি শেড নেট হাউজে তৈরী সবজি চারা উন্নত মানের হয়। এই পলি শেড নেট হাউজের নাম দিয়েছেন ‘এস আলম এগ্রো ফার্ম’।  এ বছর চারা বিক্রি করে তিনি ২০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন। ২০ একর জমিতে সবজি ফলাতে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করছে। তিনি জানান, এবছর সবজি চাষ করে তিনি ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

সম্প্রতি এস আলম এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, এই ফার্মটি পরিদর্শনে গেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সেমা। এসময় তার সাথে ছিলেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ডইরিন পুরকায়স্থ ও উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আল আমিন।

তিনি আরও জানান, সবজি চাষে তার সাফল্য দেখে এলাকায় অনেক যুবক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

সদর উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের মো. অওয়াল মিয়া বাসসকে জানান, পলি শেডে সবজি চাষ করে এবার তার ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রথম দফা সবজি বিক্রির পর দ্বিতীয় দফা বিভিন্ন জাতের চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেছেন। এখন তৃতীয় দফা চারা বিক্রি করা হবে।

আওয়াল জানান, সরকারি খরচে পলি শেড নেট হাউজ তৈরী করে দেয়ায় ১০ শতক জমি তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তিনি এ পলি শেডকে ভাগ্য বদলের চাকা হিসেবে দেখছেন।

তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় গ্রামের আবু ইউসুফ বাসসকে জানান, পলি শেড নেট হাউজ তৈরী করে দেয়ায় তিনি বিভিন্ন জাতের সবজি চারা বিক্রি করে এখন সুখি। তিনি জানান, মাত্র ১৪ হাজার টাকার সবজি বীজ কিনে মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিনে প্রায় ৩ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন।

একই বক্তব্য ধর্মপাশা উপজেলার দুধবহর গ্রামের পলি শেডে চারা উৎপাদনকারি মোখলেছুর রহমানের। 

জগন্নাথপুর উপজেলার কদমতলা গ্রামের পলিশেডে চারা উৎপাদনকারি সবজি চাষী আব্দুল মহিম বাসসকে জানান, তিনি এবছর টমেটো, মরিচের চারা উৎপাদন করেছেন। এখন তিনি পেয়াজের বীজ বপন করেছেন। মাস দেড়েকের মধ্যে মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন। তবে কত টাকা পেয়াজ বিক্রি করতে পারবেন তা অনুমান করতে পারছেন না। কারণ এবার পলি শেডে প্রথম পেয়াজ চাষ তার।

জামালগঞ্জ উপজেলার চানপুর গ্রামের সবজি চাষী জায়েদুল ইসলাম বাসসকে জানান, তাকে পলিশেড তৈরী করে দিতে দেরী হয়েছে। নতুন চাষী হিসেবে তিনি এটা বুঝতে পেরেছেন পলিশেডে তৈরী সবজি চারা উন্নত মানের হয়। একই বক্তব্য শন্তিগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াডুম্বর গ্রামের পলিশেডে সবজি চারা উৎপাদনকারি চাষী দিলোয়ার হোসেনের।

এছাড়া জেলার দিরাই উপজেলার চাতলপাড় গ্রামের আবু ছালাম, ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামের আব্দুল শহীদ ও দোয়ারা বাজার উপজেলার ধরমপুর গ্রামের সফিক ইসলাম পলিশেড নেটহাউজে সবজি চারা উৎপাদন করে লাভবান হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বাসসকে জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় সবজি চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং সবজির চাহিদা পুরনে ১০টি উপজেলার ১০ জন সবজি চাষীকে সরকারি খরচে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ১০টি পলিশেড নেট হাউজ তৈরী করে দেয়া হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, প্রতিটি পলিশেড নেট হাউজ তৈরীতে ১৮ লাখ টাকা করে খরচ হয়েছে। নেট হাউজ গুলোতে একটি করে ডিপ ইরিগেশন (গভীর নলকূপ) দেয়া হয়েছে।