শিরোনাম
রেজাউল করিম মানিক
রংপুর, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ( বাসস) : স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনা। ২০২৪ সালে সারা দেশের দৃষ্টি ছিল উত্তরবঙ্গের রংপুরে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের যে ডাক উঠেছিল, তাতে ‘বড় মোমেন্টাম’ তৈরি করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীকে হত্যা করার ঘটনাটি।
আন্দোলনের মাঝপথে গত ১৬ জুলাই পুলিশ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে। গা শিউরে ওঠা এ দৃশ্য দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে বিশ্ববাসীও দেখেছে বর্বর এ হত্যাকাণ্ড। এর পরপরই আন্দোলন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে আর পতন হয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার।
১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় পুলিশসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। ওইদিন প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে তারা।
এ সময় পুলিশের গুলিতে মারা যান আবু সাঈদ। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
এর দুদিন পর ১৮ জুলাই পার্ক মোড় তাজহাট থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে মানিক মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়।
এর পরদিন ১৯ জুলাই, রংপুর সিটি বাজারের সামনে আন্দোলনকারীদের দমনে ভয়ংকর হয়ে ওঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ দিন সাজ্জাদ হোসেন, মুসলিম উদ্দিন মিলন, আব্দুল্লাহ আল তাহির ও মেরাজুল ইসলাম মেরাজ নিহত হন। এ সময় আহত হন শতাধিক ছাত্র-জনতা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, সারা দেশে ২০ জুলাই কারফিউ দেয় হাসিনা সরকার। তবে এ কারফিউ দিয়েও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের দমানো যায়নি। তারা একের পর এক কর্মসূচি দেন।
৪ আগস্ট অস্ত্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে রংপুর নগরী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামলার শিকার হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। এদিন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা হারাধন রায় ও তার গাড়িচালক কমল রায়সহ পাঁচজন মারা যান।
এত এত মৃত্যুর খবরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে সাহস নিয়ে দাঁড়ানো অকুতোভয় বীর আবু সাঈদের আত্মত্যাগের দৃশ্যটি- যা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে, কেঁদেছে বহু মানুষ। মর্মান্তক ঘটনাটি অনুপ্রাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে আওয়াজ তোলা লাখো মানুষ।
শহিদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আন্দোলনকারী কলেজছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে (১৬) আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল বেশ আলোচিত। যদিও ১৯ জুলাই মাহিমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি অগোচরেই হয়েছিল। একমাত্র ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় ৩১ জুলাই মাহিমের বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরবর্তীতে ১ আগস্ট আদালত তার জামিনের আদেশ দেন।
সেই সঙ্গে রংপুরকে ঘিরে আরও কয়েকটি ঘটনা জাতীয়ভাবে আলোচনায় ছিল। ১৬ জুলাই পুলিশের ছোড়া গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর ১৯ জুলাই ঘটে আরেক নারকীয় ঘটনা। তবে আন্দোলনকালে ১৬ জুলাইকে ঘিরে রংপুরে যা ঘটে, তা আন্দোলনের সামগ্রিক গতি বাড়িয়ে দেয়।
১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে ৪ জন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ সময় আহত হন শতাধিক ছাত্র-জনতা।
এছাড়াও বছরের শুরুর দিকে ৩ ফেরুয়ারি রংপুরের হারাগাছে ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের তালা ভেঙে টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি সে সময় বেশ আলোচনায় ছিল।
শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়, খেলাধুলায়ও ভূমিকা রেখেছিল রংপুর। সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামের মেয়েরা ফুটবলে ভারতবধের উদ্দেশ্যে কোচবিহার যান ৪ মে। সদ্যপুষ্করণী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের মেয়েরা ভারতের কোচবিহারের দেওয়ানগঞ্জ কোচিং ক্যাম্প আয়োজিত একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে দেশে ফেরেন। এ জয় রংপুরকে দেশবাসীর কাছে নতুন করে তুলে ধরে।
বিদায়ী বছরে রংপুরবাসীর ভালো অর্জনের মধ্যে আরেকটি হচ্ছে হাঁড়িভাঙা আমের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।