বাসস
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:২৯

টিএসসিতে নতুন করে হাসিনার ছবি এঁকে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি ছাত্রসংগঠনগুলোর

টিএসসিতে নতুন করে হাসিনার ছবি এঁকে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি ছাত্রসংগঠনগুলোর। ছবি: বাসস

ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মেট্রোরেলের একটি পিলারে নতুন করে আঁকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন।

আজ সোমবার দুপুর ১টায় টিএসসিতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন স্কুল, কলেজ ও শ্রমজীবী মানুষদের এই ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।

এর আগে রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে এই ছবিটি আঁকে।
 
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্টে সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার ওই ছবিতে লাল রংয়ের ছোপ দিয়ে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ছবিটি জনতার ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রকাশের প্রতীক হয়ে ওঠে।

এর আগে গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমতিতে শেখ হাসিনার এই ছবিটে মুছে ফেলা হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সেদিন রাতেই শেখ হাসিনার একটি ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন।

পরদিন ২৯ ডিসেম্বর রবিবার প্রক্টর অফিস থেকে বিবৃতি দিয়ে এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি প্রক্টরিয়াল টিমের অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করছি।’

বিবৃতিতে এই স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়।

আজ (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই টিএসসিতে মেট্টোরেলের সেই পিলারের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এই সময় ছাত্রসংগঠনগুলো ‘ভারত যদি বন্ধু হও, হাসিনাকে ফেরত দাও’; ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’; হাসিনাকে তুলে আনো, হাজার খুনের বিচার করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
 
এ সময় টিএসসিতে হাসিনার ছবিতে শ্রমজীবী মানুষদের সোৎসাহে জুতা ও ঝাড়ু নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।

হাজারিবাগ থেকে এসেছেন রিকশাচালক মো. ওমর ফারুক। তিনি একটি জুতা বারবার হাসিনার প্রতিকৃতিতে নিক্ষেপ করছিলেন। তিনি বাসসকে বলেন, ‘আমি মনে করি, হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে লাখ লাখ মানুষের সামনে সাধারণ মানুষ ও ছাত্রদের হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত।’

রিকশা না চালিয়ে দাঁড়িয়ে জুতা মারার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষকে অনেক জ্বালাইছে হাসিনা। অনেক ছাত্র হত্যা করছে। এই হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করা আনন্দের। রিকশা তো প্রতিদিনই চালাই, একদিন না হয় হাসিনাকে জুতা মারি।’

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান বাসসকে বলেন, ‘টিএসসিতে হাসিনার এই ছবিতে জুতা নিক্ষেপ, ঝাড়ু পেটা করা- হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’

৫ অগাস্টের আগেও মানুষ এই ছবিতে ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সম্প্রতি এটি মুছে ফেলা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন মিলে ওই ছবিটি আবারও এঁকে আগের মতই ঘৃণা জানাচ্ছেন।’

গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৫ অগাস্টের পর গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে ফেলে যখন ফুল, পাখি, লতা-পাতা আঁকা হচ্ছিল, তখন আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি আমাদের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। গ্রাফিতিগুলো স্বৈরাচারের প্রতি আমাদের ক্ষোভ, ঘৃণা ও আক্রোশের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্গীরণ। তাই, আমি মনে করি এই গ্রাফিতিগুলো সংরক্ষণে সরকারের উদ্যেগ নেওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাসসকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলো দেশের প্রতিটি অঞ্চলে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজের মত করে এই গ্রাফিতিগুলোর মধ্যে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ঘৃণা ও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।’

গ্রাফিতিগুলো ছাত্র-জনতাকে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাফিতিগুলো ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের অমূল্য সাক্ষী ও সম্পদ। সরকারের উচিত গণঅভ্যুত্থানের এই গ্রাফিতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া।’

এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রতি মানুষের ঘৃণা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কোনো অপশক্তি মানুষের মনের এই ঘৃণাকে কেড়ে নিতে পারবে না।’