শিরোনাম
রংপুর, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : রংপুর কৃষি অঞ্চলে চলতি মৌসুমে সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬১ টন ক্লিন আমন চাল উৎপাদন করেছেন।
চাষাবাদের প্রাথমিক পর্যায়ে চারা রোপণের সময় খরার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও কৃষকরা দেশের অন্যতম প্রধান এই খাদ্যশস্যের সুপার বাম্পার ফলন পেয়েছে। স্থানীয় বাজারে মোটা জাতের প্রতি মণ (৪০ কেজি) আমন ধানের দাম ১ হাজার ২৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে কৃষকরা তাদের সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) কর্মকর্তারা বাসসকে জানান, চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এই অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় আবাদকৃত মাঠে থাকা মোট ৬ লাখ ১৯ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে।
চলতি মৌসুমে কৃষকেরা মোট ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬১ টন ক্লিন আমন চাল (২৯ লাখ ৮১ হাজার ৯৪২ টন ধান) উৎপাদন করেছেন যা নির্ধারিত ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ টন ক্লিন চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার ২৮৯ টন বা শতকরা ৩ দশমিক ৬৬ ভাগ বেশি।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাসস'কে জানান, এই কৃষি অঞ্চলে কৃষকরা এবার হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ গড় ফলনের হার ৩ দশমিক ২১ টন ক্লিন আমন চাল (৪ দশমিক ৮১৫ টন আমন ধান) অর্জন করেছেন।
অধিক জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের আমন ধান চাষের ফলে এ মৌসুমে আমন ধানের সুপার বাম্পার ফলন হয়েছে।
এর আগে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এ অঞ্চলের পাঁচটি জেলার জন্য চলতি মৌসুমে ৬ লাখ ২০ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমি থেকে ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ টন ক্লিন আমন চাল (২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৫০৮ টন ধান) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
আমন ধান আবাদ মৌসুমের শুরুতেই খরা পরিস্থিততির মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ সত্বেও বিভিন্ন প্রকার সরকারি সহযোগিতায় উৎসাহী কৃষকরা শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেন, যা নির্ধারিত কৃষি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী।
কৃষিবিদ রহমান বলেন, তবে, দেরীতে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যায় ৬১৭ হেক্টর জমিতে বর্ধণশীল আমন ধানের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার পরে মাছে থাকা অবশিষ্ট ৬ লাখ ১৯ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমির আমন ধানের ফসল চমৎকারভাবে বেড়েছে ওঠার ফলে এই অঞ্চলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
আমন ধান কাটা শেষ করার পর কৃষকরা শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলে সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬১ টন ক্লিন আমন চাল উৎপাদন করেছেন। তারা গত বছর ৬ লাখ ১৫ হাজার ৯৮১ হেক্টর জমি আমন ধান চাষের আওতায় এনে থেকে ১৮ লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৯ টন ক্লিন আমন চাল (২৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৪৮ টন ধান) উৎপাদন করেছিলেন।
এই কৃষিবিদ বলেন, আমন ধান কাটার পর চলতি রবি মৌসুমে কৃষকরা এখন একই জমিতে আলু, শীতকালীন সবজি ও অন্যান্য রবি শস্যের বীজ বপন কার্যক্রম ও ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রংপুরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক তারিকুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, শাহ আলম, সোহরাব হোসেন, মানিক মিয়া, আমিরুল ইসলাম ও সোলায়মান আলী বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে আমন ধান কাটা শেষ করে তারা ভালো ফলন পেয়েছেন।
তারাগঞ্জ উপজেলার দোলাপাড়া গ্রামের কৃষক মফিজার রহমান জানান, চলতি মৌসুমে তিনি মোটা জাতের আমন ধানের প্রতি একর জমিতে ৫৫ থেকে ৬৫ মণ পর্যন্ত ভালো ফলন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে মোটা জাতের আমন ধানের দাম প্রতি মণ ১ হাজার ২৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং সরু বা চিকন জাতের আমন ধানের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হওয়ায় অন্যান্য কৃষকদের মত আমিও খুব খুশি।