শিরোনাম
নীলফামারী, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সৃষ্ট মতপার্থক্য দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই ন্যূনতম পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দলগুলোর মধ্যেই হোক কিংবা বিভিন্ন মানুষের মধ্যেই হোক মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে সেই মতপার্থক্য এমন কোনো পর্যায়ে না পৌঁছায় যেখানে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এ দেশ সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবে। যেখানে দেশের মানুষের স্বাভাবিক যে চাওয়া-পাওয়া, সেগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘উল্লিখিত ওইসব পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয়-সে ব্যাপারে আমাদেও সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন স্বৈরাচার মুক্ত। এখন সামনে আমাদের আরেকটি বড় যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধ বা সংগ্রাম হচ্ছে, যে আন্দোলন বিগত ১৬ বছর যাবৎ এদেশের মানুষ, বিশেষ করে স্বৈরাচার-বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা করেছিল, সেগুলো হচ্ছে সাধারণ মানুষের ন্যায্য কথা বলার অধিকার, ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার। মানুষের সহযোগিতা নিয়ে যেসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার কথা, সে-অধিকারগুলোকে এখন প্রর্যায়ক্রমিকভাবে আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
তারেক রহমান আজ সোমবার সন্ধ্যায় নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুরি দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্যাবের ক্রসফারে নিহত নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা গোলাম রব্বানীর পরিবারের সদস্যদের ভালভাবে বসবাসের লক্ষ্যে নির্মিত নতুন বাড়ির চাবি রব্বানীর পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘গোলাম রব্বানী দেশের মানুষের কথা বলার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন-এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘রব্বানী’র মতো অনেকেই দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল এক, আর তা হচ্ছে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। মানুষের বাক স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করা। গোলাম রব্বানীকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু গোলম রব্বানী শুধু একজন নয়। গত ১৬ বছরে যে স্বৈরাচার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে গুম-খুন করেছে, সেই স্বৈরাচার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পাঁচ তারিখে।’
তিনি বলেন, সেই স্বৈরাচার গত ১৬ বছরে সারা বাংলাদেশে হাজারো গোলাম রব্বানীকে হত্যা করেছে, লাখ-লাখ পরিবারকে নির্যাতিত করেছে। পালিয়ে যাওয়ার কদিন আগেও, সেই স্বৈরাচার প্রায় দু’হাজারের মত মানুষকে হত্যা করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রায় ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি মানুষকে বিভিন্নভাবে জখম করেছে, বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে।
তারেক রহমান বলেন, গোলাম রব্বানী একজন সাধারণ মানুষ হলেও তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী। তার দোষ ছিল, তিনি দেশের মানুষের যে অধিকার, বিশেষ করে কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার-এসব বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ ছেড়ে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার, যে অধিকার দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল, গোলাম রব্বানী তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। মানুষের পক্ষে কথা বলেছিল। মানুষের কথা বলার পক্ষে, মানুষের অধিকারের পক্ষে মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে কথা বলেছিল। সে কারণে স্বৈরাচারের দোসররা তাকে হত্যা করেছিল।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এরকম বহু হত্যাকান্ড করেছে। গোলাম রব্বানীসহ আমাদের যেসব ভাইয়েরা শহিদ হয়েছে তাদেরকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব না। আমাদের যে সকল ভাইয়েরা-বোনেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বিভিন্নভাবে নির্যাতনে শিকার হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণে করেছেন তাদেরকে চিকিৎসার মাধ্যমে হয়তো আমরা কাউকে কাইকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করতে পারব, কাউকে কাউকে হয়তো কিছুটা হলেও সুস্থ করতে পারবো। যে পরিবারগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আপনারাসহ বাংলাদেশের মানুষ (যাদের পক্ষে সম্ভব) ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব পরিবারগুলোর পাশে দাড়াঁবেন। আমরা যার যতটুকু সামর্থ আছে তা নিয়ে যদি তাদের পাশে দাঁড়াই তাহলে সে পরিবারগুলো আগামী যে কয়দিন বেঁচে থাকবে কিছুটা হলেও ভালো থাকবে।’
দেশের বহু সমস্যা আছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এসব সমস্যা পর্যায়ক্রমিকভাবে আমাদের সমাধান করতে হবে। এখন এর সমাধান করতে হলে নিশ্চই কাউকে তো থাকতে হবে, যারা আপনাদের এই সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারে। গোলার রব্বানীরা চেয়েছিল দেশে একটি সিস্টেম থাকুক, এমন একটি ব্যবস্থা দেশে ধীরে ধীরে গড়ে উঠুক, যাতে করে আপনাদের সমস্যাগুলো, এলাকার মানুষের সমস্যা, সমগ্র দেশের গ্রামে-গঞ্জের লাখোকোটি মানুষের যে সমস্যা, সে সমস্যাগুলো নিয়ে যাতে কিছু মানুষ কথা বলতে পারে এবং সরকার যাতে বাধ্য থাকে দেশের মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান করার। মানুষের কথা যাতে ঠিকভাবে যেখানে পৌঁছা উচিত সেখানে পৌঁছাতে পারে। এই ব্যবস্থাটাই গোলাম রব্বানীসহ আরো হাজারো মানুষ, যাদেকে হত্যা করা হয়েছে, তারা এই ব্যবস্থাটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছে। যাতে আমরা একটা সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আজ এখানে আমরা একত্রিত হয়েছি, আপনাদের মত এরকম কোটি কোটি মানুষ, যারা বাংলাদেশকে একটি স্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে দেখতে চায়, যেখানে একজন বেকার যুবক শিক্ষিত হোক, অল্প-শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত হোক, একজন বেকার যুবককে তার কর্ম সংস্থানের জন্য বেশি বেগ পেতে হবে না। যেখানে শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষার জন্য টেনশনে থাকতে হবে না। যেখানে রাতের বেলা এবং দিনের বেলায়ও মানুষ পথ দিয়ে হেটে যাবার সময় কম বেশি নিশ্চিন্তে নিরাপদে হেঁটে যেতে পারে, একজন সাধারণ মানুষ নিজের দেশ সম্পর্কে যা চিন্তা করে, যা কল্পনা করে সেরকম একটি দেশ আমাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।’
দেশ গড়ার জন্য বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সকলকে একসাথে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সকলে সকলের মতামত উপস্থাপনের মাধ্যমে দিন শেষে যেই মতামতের পক্ষে সবচাইতে বেশি সমর্থন থাকবে সেই মতামতের ভিত্তিতেই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো।’
তিনি বলেন, ‘আজ এখানে আমরা উপস্থিত হয়েছি গোলাম রাব্বানীর পরিবারকে একটি নতুন বাসস্থান দেওয়ার জন্য। আমি আগেই বলেছি, আপনারা নিজেরাও জানেন এই মুহূর্তে সারা বাংলাদেশে হাজারো গোলাম রাব্বানীর পরিবারের মতো পরিবার আছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক ( রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব দুলু, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম ও নিহত বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর বড় মেয়ে রহমত জাহান রিক্তা। ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
একই অনুষ্ঠানে বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনে নীলফামারী, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার ১২ জন শহিদ পরিবারকে পরিবার প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ভোরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ঠনঠনিয়া গ্রাামের মামা আলি হোসেন ও মিয়া হোসেনের বাড়ি থেকে গোলাম রব্বানীকে তুলে নিয়ে যায় র্যাব। ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি সকাল সাতটায় নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অদূরে নীলফামারী-ডোমার সড়কে গোচামারী ব্রীজের পাশ থেকে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহত গোলাম রব্বানী নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।