শিরোনাম
রাঙ্গামাটি, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : পাহাড়ের পরিত্যক্ত ৪ একর জমিতে চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ১৭ মাইল ৭৭নং তৈ চাকমা মৌজা এলাকার হেডম্যান সুদত্ত চাকমা।
জনসেবার পাশাপাশি নানিয়ারচর উপজেলার ১৭ মাইল ৭৭নং তৈ চাকমা মৌজা এলাকার যাদুখাছড়া ও নব কার্বারিপাড়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে ৪ একর জমিতে বিশাল এই কমলা বাগান গড়ে তুলেছেন তিনি।
সুদত্ত চাকমার লাগানো কমলার বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ও বড় বড় কমলা। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খুচরা ও পাইকাররা বাগান থেকে কমলা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। কমলা বাগানের পাশাপাশি হেডম্যান সুদত্ত চাকমা সেখানে কমলার চারা তৈরী করে তা বিক্রি করছেন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষকদের কাছে। ছোট ছোট ঝিরি ঘেঁষে গড়ে উঠা কমলা বাগানগুলো যেন প্রকৃতিতে এনে দিয়েছে আরো অপরূপ সৌন্দর্য্য।
এলাকার সুদত্ত চাকমা জনসেবার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে কমলার বিশাল বাগান গড়ে তোলায় সকলেই তার প্রশংসা করছেন। পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে কমলা বাগান তোলার বিষয়ে সুদত্ত চাকমা বাসসকে জানান, গত কয়েকবছর আগে আমার পতিত চার একর জমিতে প্রথমে চায়না জাতের কমলা ও পরে দার্জিলিং জাতের কমলার আবাদ শুরু করি। ৩-৪ বছরের মধ্যেই বাগানে কমলার ফল আসতে শুরু করে।
তিনি জানান, আমার বাগানে বর্তমানে ৪০০টি চায়না কমলা ও ৪৫০টি দার্জিলিং কমলার গাছ রয়েছে। এবছর প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরী করা এই কমলা বাগান করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে আরো ১০/১২ জন বেকার যুবকের।
জেলার বিভিন্ন বাজারে চায়না কমলা প্রতি কেজি দুই থেকে ২৫০ টাকা ও দার্জিলিং কমলা আকার অনুযায়ী প্রতিকেজি ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার সুদত্ত চাকমা তার বাগান থেকে ৫-৬ লাখ টাকার কমলার বিক্রি করবেন বলে জানান। সরকারি প্রণোদনা পেলে পরিত্যক্ত পাহাড়ে পাহাড়ে কমলা চাষ আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। কমলা ছাড়াও বর্তমানে সুদত্ত চাকমা অন্যান্য পরিত্যক্ত জমিতে বিদেশী জাতের মাল্টা, কাজু বাদামসহ ১০-১৫ রকমের বিভিন্ন ফলের বাগান শুরু করেছে।
জেলার নানিয়ারচর উপজেলার রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে ১৬ মাইল এলাকায় সুদত্ত চাকমার নান্দনিক এই কমলা বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকেই বাগান থেকেই পাইকারি দরে কমলা কিনছেন এবং গাছের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
কমলা বাগানে আসা দর্শনার্থী মো. সাইফুল আলম বাসসকে বলেন, এই কমলা বাগানের কথা শুনেছি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখেছি। বাগানে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর কমলা বাগান করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলে অর্গানিকভাবে কমলা চাষ করা হয়েছে, এটা খুবই আশাব্যঞ্জক। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এসব কমলা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বাসসকে জানান, সুদত্ত চাকমার ব্যক্তি উদ্যোগে করা কমলা বাগান দেখতে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গিয়েছি। সুদত্ত চাকমা ছাড়াও আরো অনেকে কমলার বাগান গড়ে তুলছে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এসব বাগানগুলো পাহাড়ের মডেল। এসব বাগানে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। এ বছর জেলায় ৬৩৭ হেক্টর জমিতে কমলার বাগানে ফলন হয়েছে এবং প্রতি হেক্টরে ১০ টনের বেশী ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
আকারে বড়, রসালো আর মিষ্টি স্বাদের কমলার ফলন হচ্ছে পাহাড়ের বেশ কিছু স্থানে। এক সময় রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে আগে সাজেকের কমলার চাহিদা ছিল। আর ভূ-প্রকৃতির কারণে পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমি কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় অন্যান্য ফলের সঙ্গে পাল্ল দিয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে বাড়ছে কমলার বাগানও। প্রতিটি বাগানের কমলা গাছের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ের উৎপাদিত কমলা রপ্তানী হচ্ছে দেশে ও দেশের বাইরে।
নানিয়ারচর ছাড়াও জেলার বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু, রাজস্থলী ও বরকল উপজেলাসহ অনেক এলাকায় কমলার আবাদ করা হয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, সঠিক পরিকল্পনাসহ পাহাড়ের পরিত্যক্ত জমিকে কমলা উৎপাদনের জন্য কাজে লাগানো গেলে পার্বত্য অঞ্চল কমলা চাষের
অন্যতম এলাকা হিসেবে গড়ে উঠার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।