বাসস
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৭

সাতক্ষীরার অধিকাংশ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে

সাতক্ষীরা, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলার অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার সাথে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি। ফলে বায়ু দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়া অবাধে কাঠ পোড়ানোর কারনে একদিকে যেমন বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, তেমনি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র।

বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সাতক্ষীরায় সেটি মানছে না কেউ। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তর হাতেগোনা দু-একটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ ইটভাটা গুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে সাতক্ষীরাতে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

সাতক্ষীরা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় ১২৫টি ইটভাটার মধ্যে ৩০টি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চালু রয়েছে ৯৫টি ইটভাটা। এর মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩০টির। বাকি ৬৫টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। পরিবেশের ছাড়পত্র বিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোন সরকারি লাইসেন্সও নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর এসব ইটভাটা অবৈধভাবে চালাচ্ছে ভাটা মালিকরা। উচ্চ আদালতে রিট করার কারনে পরিবশে অধিদপ্তর অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারছে না।

এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি না থাকায় অবৈধ এসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ, তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি।
সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার সাথে তুষকাঠ মিশিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সাথে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ ও টায়ার পোড়ানো কালি।

শহরের অদূরে বিনেরপোতা এলাকার একটি ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিকের নির্দেশে দিনে অল্প কয়লা ও সারারাত শুধু জ্বালানি কাঠ, প্লাস্টিক, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করে তারা ইট পোড়াচ্ছেন। ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করলে প্রতিটি ইটে খরচ কিছুটা কম হয়। এজন্য অধিক লাভের আশায় ইটভাটা মালিকরা কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করে।

ইটভাটায় জ্বালানির কাজে কয়লার বদলে কাঠের ব্যবহার প্রসঙ্গে একটি ইটভাটার ম্যানেজার জানান, প্রথমে ইটভাটায় নতুন আগুন জ্বালানোর সময় ভিতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় সাথে প্লাস্টিক, তুষকাঠ ও টায়ারের কালি ব্যবহার করা হয়।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আলিনূর খান বাবুল বলেন, উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এসব অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও তুষকাঠ এবং টায়ার পোড়ানো কালি। 

এ প্রসঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ক্যান্সার সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এতে বৃদ্ধ এবং শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। 

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলায় বর্তমানে ৯৫টি ইটভাটার মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩০টির। বাকি ৬৫টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটা মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের ইটভাটা পরিচালনা করছেন। যে কারণে উচ্চ আদালতের রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, জেলার ইটভাটা গুলো কাঠ ও তুষকাঠ পোড়ানো শুরু করেছে জানতে পেরে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।