বাসস
  ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৮

২১৩ বিরল প্রজাতির গাছের একটি দর্শনীয় বাগান গড়ে উঠেছে ভাড়ারদহ বিলের তীরে

দর্শনীয় বাগান গড়ে উঠেছে ভাড়ারদহ বিলের তীরে

॥ মো. মামুন ইসলাম ॥
রংপুর, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস): মাত্র তিন বছর আগে ১০০ ফুট প্রশস্ত তীরে ২১৩ বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কাঠ, ফল, ঔষধি ও ফুলের গাছ লাগানোর পর ভাড়ারদহ বিল আক্ষরিক অর্থেই এখন একটি নৈসর্গিক, দৃষ্টিনন্দন ও দর্শনীয় বাগানে পরিণত হয়েছে।

অবৈধ দখলমুক্ত করার পর পুনঃখনন করে বিলের তীরে বিরল প্রজাতির গাছ রোপণ করায় বিলটি ঘন সবুজায়ন হওয়ায় সেখানে অবিশ্বাস্য এক প্রাকৃতিক দৃশ্য তৈরি হয়েছে। বিলটি এখন পরিযায়ী এবং বিপন্ন দেশীয় পাখি, মাছ, প্রাণী এবং কীটপতঙ্গের জন্য একটি অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ পৌরসভার উপকণ্ঠে অবস্থিত এই বিলে উন্নত পরিবেশ ও চোখজুড়ানো সৌন্দর্যের মাঝে পুনরুজ্জীবিত বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে এবং মুক্ত স্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিতে প্রতিদিন সেখানে অনেকেই বেড়াতে যাচ্ছেন।

বিস্তৃত পাড় ছাড়াই মোট ১১.৫৯ একর জলাভূমিসহ ভাড়ারদহ বিলের পুনঃখনন এবং এর চারিদিকের প্রশস্ত তীরে ২১৩টি বিরল প্রজাতির কাঠ, ফল, ঔষধি এবং ফুল গাছের ৬,৫০০টিরও বেশি চারা রোপণের পর থেকে সেখানে এমন এক অভাবনীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) তার পাঁচ বছর মেয়াদি (২০১৯-২০২৫) ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ (ইআইআর)’ প্রকল্পটির অধীনে এই বিল পুনঃখনন করে।

সংরক্ষিত ভূ-পৃষ্ঠের পানির সর্বোত্তম ব্যবহার, বনায়ন এবং বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি এবং বিলুপ্তপ্রায় মাছ, পাখি এবং অতিথি ও স্থানীয় বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্যকে পুনরুজ্জীবিতকরণ এবং কৃষি ও জীবিকাকে উন্নত করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ইআইআর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং রংপুর সার্কেলের জন্য বিএমডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান খান বাসসকে বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানের ঘন সবুজ, উদ্ভিদ, জলজ ও স্থলজ প্রাণী, অতিথি পাখির কিচিরমিচির কলতান এবং তাদের পানিতে সাঁতার কাটা এবং বাতাসে মুক্তভাবে উড়ে বেড়ানোসহ পুনঃখনন করা বিলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষক এবং সরকারি কর্মকর্তা, দম্পতি, যুবক ও সব বয়সের সাধারণ মানুষ বিল পরিদর্শনে আসছেন। বিলটি ইতিমধ্যেই উত্তরাঞ্চলের পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।’

প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খান ভাড়ারদহ বিলের পাড়ে লাগানো বিরল প্রজাতির গাছের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিয়েছেন। 

ভাড়ারদহ বিলের পাড়ে রোপিত গাছের মধ্যে রয়েছে- উদাল, নাইচিচি উদাল, স্বর্ণ অশোক, নাগেশ্বর, নাগলিঙ্গম, হিজল, তমাল, কাইজেলিয়াসহ দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

এ ব্যাপারে বাসস’র সাথে আলাপকালে ’রিভারাইন পিপল’-এর পরিচালক এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ড. তুহিন ওয়াদুদ ভাড়ারদহ বিলের পাড়ে ২১৩ বিরল প্রজাতির গাছ লাগিয়ে জলাশয়টিকে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো গবেষণার জায়গায় পরিণত করায় বিএমডিএ এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ‘গবেষকরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের মাঝে বিলের প্রশস্ত পাড়ে বেড়ে ওঠা বিরল প্রজাতির গাছ নিয়ে গবেষণা চালাতে পারেন। বিলটি ইতিমধ্যেই অতিথি ও দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় পাখি ও ছোট মাছ, পোকামাকড়, ছোট শামুক, শ্যাওলা, জলজ এবং কান্ডবিহীন জলজ উদ্ভিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠে এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছ।’