শিরোনাম
ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত ও জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পূর্ব ঘোষিত ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি থেকে ছাত্র নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই আহ্বান জানান।
জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আজ সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকেন। এসময় তারা মিছিলে মিছিলে জুলাই-অগাস্টের চেতনাকে সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ সময় ছাত্র-জনতাকে ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার সংস্কার ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
শহিদ মিনার সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘যারা ৭১, ৯০ ও ২৪ এ শহিদ হয়েছেন। তাদের রক্তের যে প্রতিশ্রুতি তা জুলাই প্রক্লেমেশনে আসবে। যদি জুলাই প্রক্লেমেশনে আমরা আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তি, আমাদের রক্তের কথাগুলো, আমাদের ভাইদের চোখ, হাত হারানোর কথাগুলো না পাই তবে আমরা তা মেনে নেব না।’
বাংলাদেশ ২৪ এ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি চাই না। আমরা পৃথীবীর মঞ্চে নতুন এক বাংলাদেশ দেখতে চাই। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে গেছে সেগুলোর সংস্কারের ইঙ্গিত এই প্রক্লেমেশনে থাকতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ জুলাই প্রক্লেমেশন চায়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়।’
বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছাত্র-জনতা বাস্তবায়ন করবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। আমাদেরকে বলা হয়, নতুন সংবিধানের ম্যান্ডেট কোথায়? আমরা বলি, নতুন সংবিধান নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই হবে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করতে হবে। নতুবা ছাত্র-জনতা আবারও ৩ অগাস্ট ও ৩১ ডিসেম্বরের মত মাঠে নেমে আসবে। ছাত্র-জনতাকে বলবো, আপনারা বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত না করে রাজপথ ছাড়বেন না।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের সামনে এখনো খুনিরা ও তাদের দোসররা উন্মুক্তভাবে চলাফেরা করে। আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শহিদ ভাইদের রক্তের বিচার না করতে পারলে আমরা কখনো নিজেদের মাফ করতে পারবো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে বলবো, খুনিরা এই দেশের মানুষের ঘামে অর্জিত যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে। ওই গোপালগঞ্জে খুনির দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে আছে। তারা অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের ওপর হামলা করেছে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
গণহত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হওয়া গণহত্যার বিচার চাই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের স্বস্তি চাই। আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা চাই। যে শর্ত নিয়ে এত মানুষ জীবন দিয়েছে। যে কেউ সচিবালয়ে বসে হোক, পুলিশে বসে হোক যদি সেই শর্তের সাথে, স্পিরিটের সাথে বিন্দুমাত্র বিশ্বাসঘাতকতার চেষ্টা করে তাকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা হয়নি। সকল সিন্ডিকেটের হাত বদল হয়েছে, কিন্তু তা ভাঙ্গা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে,সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বিপ্লবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, শিগগিরই শাপলা চত্বর এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের সকল অপরাধের বিচার করতে হবে এবং আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষা জুলাই প্রক্লেমেশনের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে। আমরা কখনো আমাদের আকাঙ্ক্ষা আইনের ভাষায় লিখতে পারিনি। আমরা জনগণের রাষ্ট্র কায়েম করতে পারিনি। আমাদের চেতনার গল্প শুনানো হয়েছে। স্বাধীনতার মানে বোঝানো হয়েছে চেতনা। স্বাধীনতা মানে বুঝানো হয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট দলের কাছে ক্ষমতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার অধিকার। বাংলাদেশের ছাত্র ভাই বোনদের শিক্ষার অধিকার।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘যে যোদ্ধারা জুলাইয়ে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত আমাদেরই করতে হবে। এটি আমাদের ঐতিহাসিক দায়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সকলকে নিয়ে প্রক্লমেশন ঘোষণা করার কথা জনিয়েছে। আমরা এমন সিদ্ধান্তের সাধুবাদ জানাই। এই প্রক্লেমেশন ঘোষণা করতে আমরা বিলম্ব চাইনা।’
আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোন নির্বাচন হবেনা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার টেবিল থেকে সবকিছুর সমাধান হলে ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশের রূপ সফল হতো। আমরা দেখেছি আলোচনার টেবিলে কোন সমাধান আসেনা। আমাদের জনগণের সমাধান শুধুমাত্র রাজপথ। আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোন নির্বাচন হবে না। জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের প্রতি ন্যায়বিচার হয়নি। এই মানুষগুলোর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।’