শিরোনাম
রংপুর, ১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : নতুন বছরের প্রথম দিনেই রংপুরে অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। গত কয়েকদিন ধরে উত্তরের এ জনপদের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে।
এতে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে অতিদরিদ্র মানুষের কষ্ট বাড়ছে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে আয় কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের । নতুন বছরে এ অঞ্চলে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বুধবার সকাল ১০টায় রংপুরে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে রয়েছে প্রকৃতি। সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় দিনে-রাতে অনুভূত হচ্ছে ঠান্ডা। বাতাসের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ আর্দ্রতা কাছাকাছি আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাপমাত্রা আরো নেমে যাওয়ার শঙ্কাসহ এ অবস্থা কমপক্ষে আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
নগরীর প্রধান ডাকঘরের সম্মুখে, স্টেশন এলাকার বাবুপাড়ায়, লালবাগ, পায়রা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে বসেছে এসব গরম কাপড়ের অস্থায়ী দোকান। সেই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে বিক্রি বেড়েছে শীতের পোশাকের। এছাড়াও রিকশা-ভ্যানে করেও শীতের পোশাক বিক্রি করছেন অল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা। এসব শীতবস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- প্যান্ট, ট্রাউজার, শার্ট, চাদর, কানটুপি, উলের সুয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, মোজাসহ হরেক রকম শীতের বাহারি পোশাক। ছেলে-মেয়ে, শিশু ও বয়স্ক মানুষদের শীতের পোশাক পাওয়া যায় স্বল্পমূল্যে। পছন্দের পোশাকটি কিনতে ক্রেতারা ছুটছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর-দামে মুখরিত ফুটপাতে অস্থায়ী এসব দোকান।
সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় ঢেকে থাকে রংপুরের প্রকৃতি। দুপুরের দিকে কুয়াশা ভেদ করে উঁকি দেয় লাল সূর্য। খেটে খাওয়া মানুষদের উপার্জনের উপরেও প্রভাব ফেলেছে এ মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া। তবে ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখিও শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতায় সকাল থেকে রংপুর নগরীতে মানুষের সমাগম কমেছে । কমে গেছে যানবাহন চলাচল। হিমালয়ের বরফগলা বাতাসে শীত যেন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে মানুষসহ পশুপাখিকে। কুয়াশাও পড়ছে বৃষ্টির মতো। এতে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে মারাত্মকভাবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে এখন তা অনেকটা মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীরের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন দরিদ্র পরিবারগুলো। এমন আবহাওয়ায় ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে রংপুরের তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। বাতাসের আর্দ্রতা কাছাকাছি হওয়ায় বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হতে না পারায় সূের্যর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। পরিণতিতে আবারো শীত জেঁকে বসেছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আরো এক সপ্তাহ থাকলেও এরপর আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বাসস কে জানান, শীত মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জেলা প্রশাসনের। এরই মধ্যে নগরীর ৩৩ ওয়ার্ডসহ জেলার আট উপজেলা ও তিন পৌর এলাকায় সরকারিভাবে ২৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীত মোকাবিলায় আরো ৩০ হাজার পিস কম্বলের চাহিদা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।