শিরোনাম
লালমনিরহাট, ১জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটে মানুষ। ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে বেশি কষ্টে পড়েছে লালমনিরহাটের চর অঞ্চলের মানুষজন। সকাল ১০ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হওয়ার তথ্যটি ‘বাসস’কে জানিয়েছেন রাজারহাট আবহাওয়া অফিস। চলতি শীতের মৌসুমে সবচেয়ে নিম্ন তাপমাত্রা আজ। বেলা ১২টা পার হলেও দেখা মিলছে না সূর্যের।
কুয়াশার ঘনত্ব বেশি হওয়ার যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে সতর্কতার সঙ্গে যাতায়াত করছে। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুনের কুণ্ডলী জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। কনেকনে ঠান্ডায় শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। দিনের বেলা সূর্যের উত্তাপ না থাকায় হিমেল বাতাসে কমতে থাকে তাপমাত্রার পারদ। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত তীব্র শীত অনুভূত হতে থাকে।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকেই পরিবারের আয়-রোজগারের কথা ভেবে শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকালে দেরিতে হলেও কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
সদরের বড়বাড়ী ইউনিয়নের আশরাফুল ইসলাম (৪২) বলেন, ঠান্ডায় অবস্থা খুব খারাপ। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে। রাতে ঘর থেকে বাহির হওয়ার যায় না এতো কুয়াশা। এমন পরিস্থিতিতে ছোট বাচ্চাতে নিয়ে সমস্যায় আছি।
লালমিনরহাট সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ভ্যান চালক আশরাফুল ইসলাম(৪২) বলেন, “কয়েকদিন থেকে খুব ঠান্ডা। আজ আরও বেশি । হাত পা বরফ হয়ে যায়। কাজ করতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের ধরলার পাড় এলাকার আমজাদ আলী (৪৮) বলেন, চাষাবাদের কাজ করতেছি । পানিতে হাত দেওয়া যায় না, এতো ঠান্ডা। তার পরেও হামারগুলার কাজ ছাড়া উপায় নাই।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, গত ১ মাস ধরে এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওঠানামা করছে। আগামীতে আরো তাপমাত্রা কমে শৈত্যপ্রবাহ এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, ‘প্রতি বছর এ এলাকায় শীতের দাপট অনেকটাই বেশি থাকে। তাই ঠান্ডার কারনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল মানুষের মাধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে, লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা। এ বিষয়ে, লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আব্দুল মোকাদ্দেম বাসস’কে জানান, আমরা প্রতিবছরই এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করে চলেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তারা দ্রুতই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি রয়েছে। রোগে প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশুদের কোনোভাবেই ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না। সেই সঙ্গে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওনোর পাশাপাশি ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওনোর পরামর্শ দেন।