বাসস
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৫২

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাজউকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযান

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাজউকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযান

ঢাকা, ১ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস): সেবা প্রদানে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম আজ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
 
তিনি জানান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ছদ্মবেশে রাজউকের প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহকালে প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে রাজউক কর্মচারীদের যোগসাজশে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।

এছাড়া, প্লট বরাদ্দ প্রাপকদের নথি গায়েব ও বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রবাসী মালিকদের ছবি পাল্টিয়ে ভুয়া মালিক সাজিয়ে প্লট বিক্রয়ের অভিযোগের সত্যতা অভিযান পরিচালনাকারী টিমের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। টিম জানতে পারে, নথি গায়েবের বিষয়ে জড়িত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) -এর কাছ থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্লটসমূহের বিষয়ে রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়। রেকর্ডপত্রসমূহ বিশ্লেষণপূর্বক কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এদিকে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের মাইজকান্দি গ্রামের ৩টি ব্রিজ ও গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ না করে বিল উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয় থেকে আজ এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতে ওড়াকান্দি ইউনিয়নের মাউজকান্দি গ্রামের ৩টি ব্রিজ সরেজমিনে পরিদর্শন করে অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় ব্রিজ থেকে পড়ে গিয়ে একজন ভুক্তভোগীর বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে বলে টিম নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ থেকে ওই কাজের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাইজকান্দি গ্রামের ৩টি ব্রিজসহ রাস্তা নির্মাণকাজের জন্য ৮৫ লাখ টাকার অধিক চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে। নথিপত্র বিশ্লেষণে ওই ৩ টি ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ না করে বিল দাখিল করে ওই অংশ বাবদ ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা বিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে বলে ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। অর্থাৎ ৭৮ লাখ টাকার বিল কাজ না করেই উত্তোলন করা হয়েছে বলে টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্লট-ফ্ল্যাট দখল, প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কমিশন বাণিজ্য করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে। এনফোর্সমেন্ট টিম সরেজমিনে মিরপুরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করে এবং অভিযোগে উল্লিখিত বিভিন্ন বেদখল হওয়া জায়গা পরিদর্শন করে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পায়। পরবর্তীতে এনফোর্সমেন্ট টিম জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে।

এদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসারদের বিরুদ্ধে বিল্ডিং নির্মাণ কোড না মেনে নকশা অনুমোদন, বিশাল অংকের লেনদেনের বিনিময়ে অনুমোদনহীন ভবনকে নোটিশ প্রদান না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ওই অফিসের সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহ করে দুদক টিম। ভুক্তভোগী ১ জনের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার কাছ থেকে ঘুষ দাবি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

এছাড়া নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে নিম্নমানের কাজ করাসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে টিম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বাস্তবায়নকৃত অভিযোগে বর্ণিত কয়েকটি প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং তৎসংলগ্ন রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে।