বাসস
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:০২

মৌমাছির গুঞ্জরণে মুখরিত জামালপুরের সরিষা ক্ষেত

সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহে মেতে উঠেছে পেশাদার মৌয়ালরা। ছবি: বাসস

জামালপুর, ১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জামালপুরে সারি-সারি সরিষার ক্ষেত এখন নজরকাড়া হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। মাঠজুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ যেন ঢেকে দিয়েছে হলুদ গালিচায়। গ্রামীণ জনপদ হয়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর। প্রকৃতির অপরূপ সাজের পাশাপাশি মধু সংগ্রহে মেতে উঠেছে পেশাদার মৌয়ালরা।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তারা মধু সংগ্রহকে একটি সম্ভাবনার পাশাপাশি একটি লাভজনক পেশা হিসেবে বিবেচনা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানায়, মধুর উচ্চ চাহিদা এবং উপযুক্ত লাভের কারণে দেশের উত্তর-মধ্য অংশে অবস্থিত জেলায় মৌমাছি পালন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় এলাকাটি ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় একটি নজরকাড়া এবং প্রশান্তিদায়ক হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে এবং সেই সঙ্গে মধু সংগ্রহকারীরা ইতোমধ্যে সরিষা ক্ষেত থেকে ১০,৫৩০ কিলোগ্রাম মধু সংগ্রহ করেছেন।

মধু সংগ্রহকারীরা চলতি মৌসুমে সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহের জন্য ৭,২৮৭টি মৌচাক স্থাপন করে, যা মধু উৎপাদন, ফসল পরাগায়ন এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার কৃষকরা ৪১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করলেও মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে ৪ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমি থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় ৪৫ জন মধু সংগ্রহকারী জেলার সাতটি উপজেলায় মৌচাক স্থাপন করেছেন।

মধু সংগ্রহকারীরা ইসলামপুর উপজেলায় ২,৮১২টি, মেলান্দহে ১,১০৫টি, সরিষাবাড়ীতে ১,১০০টি, মাদারগঞ্জে ৭৮০টি, বকশীগঞ্জে ১,০৫০টি, দেওয়ানগঞ্জে ২৩০টি এবং জামালপুর সদরে ২১০টি মৌমাছির বাক্স স্থাপন করেছেন।

ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নে ২০০টি মৌচাক স্থাপনকারী কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, আমি সবসময়ই ভালো লাভের আশায় গাজীপুর থেকে মধু সংগ্রহ করতে জেলায় আসি।

তিনি আমাদের জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আজ পর্যন্ত তিনি ৮০০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন।

তিনি বলেন, প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আমরা ভালো পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারব।

জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ চলবে বলেও জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা নুরুল হুদা মেলান্দহ উপজেলার ছাবিলাপুর গ্রামে ১৯০টি মৌচাক স্থাপন করেছেন।

ইতোমধ্যে তিনি ৩৫ মণ মধু সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, আমি সারা বছর বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করি এবং গত চার বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত।

সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি গত ১৫ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, মধু সংগ্রহের আয়ের ওপরই আমার সংসার চলে।’

মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের সরিষা ক্ষেত থেকে তিনি ৩৫ মণ মধু সংগ্রহ করেন।

তিনি বিনিয়োগ সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে ঋণ পেলে তার পক্ষে সুচারুভাবে পেশা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা জানান, গত বছর ৩৪ জন মধু সংগ্রহকারী ৫ হাজার ৬৪৩টি বাক্স স্থাপন করে ২৬ হাজার ৪৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করলেও এ বছর তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, মধু সংগ্রহের সময় সরিষা চাষীরা পরাগায়নের ফলে লাভবান হওয়ায় কৃষকরাও খুশি।