শিরোনাম
ঢাকা, ২ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস): বিচারপ্রার্থী বা সেবাগ্রহীতাকে সহযোগিতা দিতে সুপ্রিম কোর্ট ‘হেল্পলাইন নাম্বার’ চালুর পর গত তিন মাসে সারা দেশ থেকে সহস্রাধিক কল এসেছে।
এসব ফোন কলের মাধ্যমে আইনি পরামর্শ, অভিযোগ দাখিল এবং মামলার তথ্য দিয়ে বহুমাত্রিক সহযোগিতা করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেল্পলাইন সেবা চালু হওয়ার পর সারা দেশ থেকে এ পর্যন্ত আইনি পরামর্শ, অভিযোগ দাখিল ও মামলা সম্পর্কিত মোট এক হাজার ৩টি কল আসে। এর মধ্যে ৬০৪টি কল ছিল আইন পরামর্শ এবং সেবা চেয়ে। ৩৪৪টি কল আসে মামলার তথ্য জানতে চেয়ে। আর বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, কাজে অবহেলা, সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ও অসদাচরণের অভিযোগ জানাতে কল আসে ৫৫টি। এই ৫৫টি অভিযোগের মধ্যে বিলম্বে আইনি সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল ২২টি। বাকি ৩৩টি অভিযোগ ছিল বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, কাজে অবহেলার। এই ৩৩টি অভিযোগের মধ্যে ১২টি অভিযোগ বিভিন্ন জেলা আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ৩টি, জেলা আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১২টি এবং ৬টি অভিযোগ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
বিচারপ্রার্থী বা সেবাগ্রহীতাকে সহযোগিতা দিতে তিনমাস আগে হেল্পলাইন নাম্বার (+৮৮ ০১৩১৬১৫৪২১৬) চালু করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি হেল্পলাইন সার্ভিসটি পরিচালনা করছেন। সরকারি ছুটির দিন বাদে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই হেল্পলাইন সার্ভিস চালু থাকে।
সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক সেবার মান উন্নয়নে এবং সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন। যেখানে বলা হয়, যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আচরণবিধি ও নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সেবা গ্রহীতাকে হয়রানি করেন বা আর্থিক লেনদেন করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে আচরণবিধি মানতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্ব পালনের সময় আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে অহেতুক বিলম্ব করা যাবে না। সেবাগ্রহীতাকে কোনো রকম হয়রানী না করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।
দেশের ২৫ তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট শপথ নেয়ার পর বিচার বিভাগকে গতিশীল ও সময়োপযোগী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষতা আনয়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। বিগত ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ওই রোডম্যাপে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অর্থপূর্ণ সংস্কার নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষিত হয়। পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
এছাড়া, ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ দরখাস্ত চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বর্তমানে পূর্ণ গতিতে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে 'হেল্প লাইন' চালু, মনিটরিং কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।