শিরোনাম
। জীতেন বড়ুয়া ।
খাগড়াছড়ি, ২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। প্রকৃতি যেন এখানে তৈরি করেছে নজরকাড়া হাজারো চিত্র। চার পাশে বিছিয়ে রাখা শুভ্র মেঘের চাদরের নিচে রয়েছে সবুজ বনারাজিতে ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে আঁকা-বাঁকা সড়ক। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে নাম না জানা নদ-নদী ও ঝর্ণাধারা।
খাগড়াছড়ির সর্বোচ চূড়া আলুটিলা। যার উচ্চতা সমতল থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট উপরে। আলুটিলার পার্বত্য চূড়া পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ৬ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ি শহরের দৃশ্য সত্যিই উপভোগ করার মত। আলুটিলায় রয়েছে রহস্যময় এক সুড়ঙ্গ। প্রায় সাড়ে তিনশ’ ফুট নিচে পাহাড়ের তলদেশে এ সুড়ঙ্গের দীর্ঘ প্রায় ৩০ ফুট। প্রতিদিন পর্যটকরা এ রহস্যময় সুড়ঙ্গ দেখতে আসেন। অন্ধকার সুড়ঙ্গে মশাল জ্বালিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
খাগড়াছড়ির হৃদয় মেম্বার পাড়ায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্ণা ‘রিছাই ঝর্ণা’। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ ঝর্ণাটি দেশের অন্যতম। রিছাং ঝর্না দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষের ভিড় জমে। মহালছড়ির মাইচছড়িতে পাহড়ের প্রায় ১৩০০ ফুট চূড়ায় রয়েছে দেবতা পুকুর (ত্রিপুরা ভাষায় যা মাতাই পুখরী) নামে পরিচিত। চারিদিকে মালভূমি দ্বারা পাহাড় বেষ্টিত হওয়ায় দেবতা পুকুরকে সমতল ভূমিতে মনে হয়।, এ পুকুরের পানি কখনো কমে না।
খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্ত শহর রামগড়। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমারেখায় ফেনী নদী। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ অর্থাৎ বিজিবি ‘ জম্ম স্থান’ এখানে। রয়েছে কৃত্রিম লেক ও ঝুুলন্ত সেতু। মানিকছড়িতে রয়েছে মার্মা চীফের প্রায় তিনশ’ বছরের প্রাচীন রাজ বাড়ী ও ডিসি পার্ক। এ ছাড়া জেলা সদরে রয়েছে জেলা পরিষদ হটিক্যালচার পার্ক।
ঢাকা থেকে সরাসরি গাড়ীতে করে পার্বত্য খাগড়াছড়িতে আসা যায়। প্রতিদিন খাগড়াছড়ির উদ্দেশে ঢাকার কমলাপুর ও ফকিরাপুল থেকে দিনে ও রাতে বহু বিলাস বহুল গাড়ি ছেড়ে যায়। খাগড়াছড়িতে রয়েছে পর্যটকদের থাকার জন্য পর্যটন মোটেল, জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউজ ও উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বনবিভাগের রেষ্ট হাউজ ছাড়াও উন্নতমানের বেশ কিছু বেসরকারী আবাসিক হোটেল রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়িতে দেখার মতো যেমন আকর্ষণীয় স্পট রয়েছে, তেমনই পর্যটকদের থাকার জন্য সু-ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন খাগড়াছড়ি’র পর্যটন স্পটগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা, বলেন, খাগড়াছড়ি’র পর্যটন স্পটগুলোর কে উন্নয়নে জেলা পরিষদ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে খাগড়াছড়ি হবে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
খাগড়াছড়ির সৌন্দর্য উপভোগ করার আপনাকে হাতছানি দিয়ে ঢাকছে। প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযকে কাজে লাগাতে পারলে খাগড়াছড়ি হতে পারে দেশের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম । সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে। প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও পাহাড়ি-বাঙ্গালী মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস। অতীতের সব বিভ্রান্তি ভুলে পার্বত্য জনপদে পাহাড়ি-বাঙ্গালী নির্বিশেষে সকল নাগরিক এগিয়ে চলুক সামনের দিকে। পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস স্থাপনের মাঝে রয়েছে এ অঞ্চলের প্রকৃত শান্তি ও সমৃদ্ধি। আমরা তাকিয়ে আছি সম্ভাবনাময় সমৃদ্ধি আর স্বপ্নমাখা আগামীর পানে।
খাগড়াছড়ির এতোসব রহস্যময় সৌন্দর্য দেখলে আপনার কাছে মনে হবে এ যেন এক রুপ গল্পের স্বপ্নপুরী। যেখানে দৈত্যরা রাজ কুমারীকে ঘুম পাড়াতো সোনা আর রুপার কাঠি দিয়ে। তাছাড়া যেখানে আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে, পাহাড়ের বুকভেদ করে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ। তা দেখতে হলে তো আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে খাগড়াছড়িতে।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র:
সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যময় অহংকার খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ পথ আলুটিলা। জেলা সদর থেকে মাত্র ৮ কিঃমিঃ পশ্চিমে অবস্থিত এ আলুটিলা। প্রায় হাজার ফুট উঁচু এ ভূ-নন্দন বিন্দুটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটন স্পট। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর উদ্যোগে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, বিশ্রামের জন্য পাকা ছাউনী,পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ইত্যাদি করা হয়েছে। এ টিলার মাথায় দাঁড়ালে শহরের ছোট/খাট ভবন,বৃক্ষ শোভিত পাহাড়, চেঙ্গী নদীর প্রবাহ ও আকাশের আল্পনা মনকে অপার্থিব মুগ্ধতায় ভরে তোলে। চোখে পড়ে আঁকা বাঁকা উচুঁ নিচু ঢেউতোলা সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে ইটের রাস্তা। পাহাড়ি জুমিয়াদের ছোট ছোট মাচার তৈরী জুমঘর। আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি চমৎকার ডাকবাংলোও রয়েছে এখানে। এ স্থানটিকে আরো আকর্ষণীয় করা লক্ষ্যে এখানে ইকো-পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
আলুটিলার সুরঙ্গ বা রহস্যময় গুহা:
গা ছম ছম করা অনুভূতি নিয়ে পাহাড়ি সুরঙ্গ পথ বেয়ে পাতালে নেমে যাওয়া কল্পনার হলেও আলুটিলার সুরঙ্গ কল্পনার কিছু নয়। পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে গুহার মুখ পর্যন্ত যেতে দর্শনার্থীদের এক সময় খুব কষ্ট হলেও এখন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে সেখানে পাকা সিঁড়ি করে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিড়িঁ বেয়ে নীচে নেমেই সেই স্বপ্নীল গুহামুখ। আলুটিলা সুরঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮২ফুট। জমকালো অন্ধকার এ গুহায় আগুনের মশাল নিয়া ঢুকতে হয় কিছুটা সাহস নিয়েই। গুহায় আলো আধাঁরীর মাখামাখিতে এক অপরূপ দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। ভেতরে অবিরাম ঝিরঝির বাদুর ঝুলে থাকা শির শির ছন্দে ছুটছে হিম শীতল ঝরনার স¦চ্ছ পানি। অনবদ্য রহস্যের উৎস প্রাকৃতিক এ সুড়ঙ্গের ভেতরটা দেখলে অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে মন হতবাক হয়ে যায়। মনে হয় যেন নিখুঁতভাবে ছেনি দিয়ে পাহাড় কেটে কয়েক হাজার দক্ষ কারিগর এ গুহাটি তৈরি করেছে।
দেবতা পুকুর:
জেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিঃমিঃ দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের কোল ঘেঁষে অবস্থিত মাইচছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বত শ্রেণী হতে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। নুনছড়ি নদীর ক্ষীণ স্রোতের মাঝে রয়েছে প্রকান্ড পাথর। স্বচ্ছ জলস্রোতে স্থির পাথর মোহিত করে, প্রকৃতির অপূর্ব সাজে মুগ্ধতায় শিহরিত হয় মন। সমুদ্র সমতল হতে ৭০০ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় দেবতার পুকুর রূপকথার দেবতার আশির্বাদের মতো সলিল বারিরস্রোতহীন সঞ্চার। পাঁচ একর আয়তনের এ পুকুরটির স্বচ্ছ জলরাশির মনভোলা প্রাশান্তি মুহূর্তের মাঝে পর্যটকদের হৃদয় মন উদাস করে দেয়। পুকুরের চতুর্দিকে ঘন বন, যেন সৌন্দর্যরে দেবতা বর নিয়ে দাঁড়িয়ে। কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জল তৃষ্ণা নিবারণের জন্য স্বয়ং জল-দেবতা এ পুকুর খনন করেন। পুকুরের পানিকে স্থানীয় লোকজন দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নরনারী পূণ্য লাভের আশায় পুকুর পরিদর্শনে আসে।
ভগবান টিলা:
জেলার মাটিরাংগা উপজেলা থেকে সোজা উত্তরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত ভগবান টিলা। জেলা সদর থেকে এর কৌণিক দূরত্ব আনুমানিক ৮৫ কিঃমিঃ উত্তর-পশ্চিমে। ঘন সবুজের ভিতর আঁকা-বাঁকা রাস্তা দিয়ে যতই এগিয়ে যাওয়া যায় পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গ সকলকে বিমোহিত করে। এ যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া পর্বত রূপসী। সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১৬০০ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ টিলা সম্পর্কে কথিত আছে, এতো উচুঁ টিলায় দাঁড়িয়ে ডাক দিলে স্বয়ং স্রষ্টাও ডাক শুনতে পাবেন। প্রাচীন লোকজন এ টিলাকে “ভগবান টিলা” নামকরণ করেছিলেন। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি’র একটি আউট পোষ্টও আছে এখানে। সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের দাঁড়ালে মনে হয়, আপন অস্তিত্ব শুন্যের নিঃসীমতায় হারিয়ে গেছে। ঘন সবুজ বাঁশের ঝোপ, নাম-না জানা পাখির ডাক, পাহাড়ের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণার কলকল শব্দ-সবকিছু মিলিয়ে হারিয়ে যাওয়ার এক অনন্য লীলাভূমি।
দুই টিলা ও তিন টিলা:
প্রকৃতির এক অপূর্ব বিষ্ময় এ দুই টিলা ও তিন টিলা। জেলা সদর থেকে মাত্র ৪২ কিঃমিঃ দূওে খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা-মারিশ্যা রাস্তার কোল ঘেঁষে এ টিলায় দাঁড়ালে ভূগোল বিধৃত গোলাকৃতি পৃথিবীর এক চমৎকার নমুনা উপভোগ করা যায়। পাহাড় চুড়ায় দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায় মনে হয় যেন পৃথিবীর সমস্ত সবুজের সমারোহ এখানেই সমষ্টি বেঁধেছে। এ টিলার অচেনা দৃশ্য যেন ক্যানভাসের উপর কোন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর তুলির আঁচড়।
আলুটিলার রিচাং ঝর্ণা (মারমা ভাষা)
জেলা সদর থেকে আলুটিলা পেরিয়ে সামান্য পশ্চিমে মূল রাস্তা থেকে উত্তরে ঝর্ণা স্থলের দূরত্ব সর্ব সাকুল্যে প্রায় ১১ কিঃমিঃ ঝর্ণার সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। এটি রিচাং ঝর্ণা নামে পরিচিত। দূরের উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়, বুনো ঝোপ, নামহীন রঙ্গীন বুনো ফুল-এসব নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য যে কাউাকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহ-মন ভরে ওঠে। হাজার ফুট উঁচু থেকে নেমে আসা স্ফটিক-স্বচ্ছ জলরাশি নির্ঝরের স্বপ্নের মাত অবিরাম প্রবহমান।
বিজিবি’র এর জন্মস্থান রামগড়:
খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন সীমান্ত শহর রামগড়। এ রামগড় শহরেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অগ্রযাত্রা শুরু হয়। সে জন্য রামগড়কে বিজিবি এর জম¥ভূমি বলা হয়। বহু স্মৃতি বিজড়িত এ সীমান্ত শহর এবং স্মৃতিস্তম্ভ, বাংলাদেশ ও ভারত বিভক্তকারী ফেনী নদীর দৃশ্যাবলী খুবই মনমুগ্ধকর। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে উপজেলা পরিষদের সামনে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন স্পট। এখানে রয়েছে ঝুলন্ত ব্রীজ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কৃত্রিম লেক, দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ব শহীদ মিনার সব কিছু মিলিয়ে হঠাৎ করে রামগড়কে ইউরোপের কোন একটি সিটির মত মনে হয়।
সীমান্তবর্তী রামগড় চা বাগান:
খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় সীমান্তের গা ঘেষে খাগড়াছড়ি-ফেনী সড়কের দু-ধারে গড়ে উঠেছে বিশাল চা বাগান। যা খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্পকে করেছে স্বয়ং সম্পূর্ণ। খাগড়াছড়ি জেলায় আসা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সদা প্রস্তুত। বিশাল এলাকা জুড়ে এ চা বাগানে আসলে পর্যটকরা বুঝতেই পারবে না তারা সিলেটে না খাগড়াছড়িতে আছে।
মানিকছড়ির রাজবাড়ী:
খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান মানিকছড়ি মংসার্কেল চীফ(মংরাজা) এর রাজবাড়ী এবং রাজত্বকালীন স্থাপত্য। রাজার সিংহাসন, মূল্যবান অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক স্মৃতি বিজড়িত রাজবাড়ী। রাজবাড়ী এবং তৎকালীন রাজার স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবদান ছিল উল্লেখ করার মত। মংরাজার উত্তরাধিকার সূত্র নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ ও জটিলতার কারণে রাজবাড়ীটি আজ চরম অবহেলিত।
পর্যটন মোটেল, খাগড়াছড়ি:
নির্মাণ শৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল। সাম্প্রতিক কালে নির্মিত এ মোটেলটি শহরের প্রবেশ মুখেই,পাশে বয়ে যেছে চেঙ্গীর শান্ত স্রোত কোন এক পূর্ণিমার রাতে চাঁদের নরম আলোয় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইলে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের বিকল্প নেই। ৬.৫০ একর জমির উপরে নির্মিত এ মোটেলে মোট কক্ষ সংখ্যা ২৫টি। তন্মধ্যে, ১৫টি নন-এসি কক্ষ, ০৯টি এসি কক্ষ ও ০১টি ভি আই পি স্যুট। ১০০ আসন বিশিষ্ট কনফারেন্স কক্ষ ছাড়াও এখানে আছে ৫০ আসনের চমৎকার রেষ্টুরেন্ট।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র:
খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র তিন কিঃমিঃ পূর্বেই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। সবুজের অফুরন্ত সমারোহ আর স্বপ্নীল আবেশে যদি নিজেকে ভূলতে চাইলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রই আদর্শ স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি এ কেন্দ্রটি। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসে শুধু সবুজের স্নিগ্ধতা মন্থনের আশায়।
শতায়ূ বর্ষী বটগাছ:
মাটিরাংগা উপজেলার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় এ প্রাচীন বটবৃক্ষ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয় এ যেন দর্শনীয় আশ্চর্য্যরে কোন উপাদান। পাঁচ একরের অধিক জমির উপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকের কাছে দারুন আকর্ষণীয়। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুড়িমূল কালের পরিক্রমায় এ একটি নতুন বটবৃক্ষের পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, ঝুড়ি মূল থেকে সৃষ্ট প্রতিটি বটগাছ তার মূল গাছের সাথে সন্তানের মতো জড়িয়ে আছে। কথিত আছে, এ বটবৃক্ষের নীচে বসে শীতল বাতাস গায়ে লাগালে মানুষও শতবর্ষী হয়।
ঠান্ডা ছড়া:
খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষনার উল্টো দিকে খাগড়াছড়ি আদর্শ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে ৫ মিনিট হেটে গেলে একটি পাহাড়ী ছোট নদী। হাটু পানির এ নদী ধরে পূর্ব দিকে আরো ৫ মিনিট হাটলে হাতের ডান দিকে পাহাড় থেকে আসা ছোট ছড়াটিকে দেখতে অনেকটা ড্রেনের মত মনে হয়। দুই দিকে পাহাড় মাঝখানে ছিকন ছড়া, উপরে নানা জাতের গাছের ছাউনী সব মিলিয়ে একটি সুরঙ্গ পথের মতো। ধীর গতিতে পা টিপে টিপে ছড়ার ভিতর ডুকতে হবে। ছড়ার শেষ মাথায় পৌছতে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা লাগবে। পুরো ছড়াটি দেখতে হলে সকালেই এই স্পটটিতে পৌছতে হবে এবং সঙ্গে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিতে হবে। ছড়াটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হল গরমের দিনে এর পানি ফ্রিজের মত ঠান্ডা থাকে। তাই এর নামকরন করা হয়েছে ঠান্ডা ছড়া।
দীঘিনালা শিবছড়ি পাহাড়:
সৌন্দর্যের আরেক নাম শিবছড়ি পাহাড় এটি দীঘিনালা থেকে প্রায় ১৬ কিঃমিঃ দূরে দেওয়ানপাড়া নামক এলাকায় অবস্থিত। ছড়া, নালা, গভীর অরন্য পেরিয়ে বোয়ালখালী নদীর পাশ ঘেষে সুউচ্চ পাহাড়ী ঝর্না ও সৈান্দর্যমন্ডিত বিভিন্ন পাথরের স্তুপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। তাছাড়া শিবছড়ি পাহাড়ের ৩কিঃমিঃ দূরে সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ১১ হাত লম্বা ৩৯ হাত চওড়া দুইটি স্বল্প আকৃতির কৃষ্ণের শীলা আসন।
হাতির মাথা আকৃতির পাহাড়:
প্রকৃতির আরো এক রহস্য হাতির মাথা আকৃতির পাহাড়। খাগড়াছড়ির পেরাছড়া গ্রামে অবস্থিত পাহাড়টিকে দেখতে হাতির মাথার মত মনে হয়। কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড় পার হয়ে ৩০/৩৫ ফুট উচ্চতার এ পাহাড়টিকে দেখতে হয় লোহার সিড়ি বেয়ে। এই সিড়িতে উঠা মানে হাতির শুরের উপরে উঠা আর সামনে চলা মানে শুর বেয়ে হাতির মাথায় অর্থাৎ পাহাড়ের মাথায় উঠা। পাহাড়ে উঠার পর দেখা যায় প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য।
পানছড়ি অরণ্য কুঠির:
জেলার পানছড়ি উপজেলায় নির্মিত হয়েছে এ শান্তিপুর অরণ্য কুঠির। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মুর্তি। যা দেখার জন্য ভিড় করছে শত শত পর্যটক।
দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা:
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় নির্মিত খাগড়াছড়ি গেইট, ভাস্কর্য, ম্যুরালসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। এ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো খাগড়াছড়ি শহরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে।
আরও অনেককিছু:
এসব স্থান ছাড়াও মহালছড়ি হ্রদ, দিঘীনালা বড়াদম দীঘি, জেলা সদরের ধর্মপুর আর্য বন বিহার, খাগড়াছড়ি শাহী জামে মসজিদ, দীঘিনালার বন বিহার ইত্যাদি চমৎকার দর্শনীয় স্থান। জেলার একমাত্র ষ্টেডিয়ামটি দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান বললে মোটেই বেশি হবে না। কেননা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির পরেই বহুল আলোচিত শান্তিবাহিনীর অস্ত্রসমর্পন অনুষ্ঠান হয়েছিল ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি ষ্টেডিয়ামেই।