বাসস
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৪

হাসান আরিফ তার কর্মের মাঝে বেঁচে থাকবেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফ। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস): অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফ ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ, যিনি তার কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন।

প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফ স্মরণে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে মো. আসাদুজ্জামান একথা বলেন।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর শুনে আমার পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমার কাছে মনে হয়েছিল আমি আমার কাছের কোনো আপনজনকে হারালাম। প্রয়াত হাসান আরিফ ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ, যিনি তার কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন।'

আজ বাদ আসর অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ভবনের রুফটফে আয়োজিত এই দোয়া মাহফিলে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, তিন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা, সলিসিটর, ডেপুটি সলিসিটর সহ-অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। মাহফিলে হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফ উপস্থিত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব শেষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত হাসান আরিফের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফ গত ২০ ডিসেম্বর বেলা ৩টা ১০ মিনিটে ৮৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গত ২৩ ডিসেম্বর মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তিনি চিরশায়িত হন।

এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে গত ২৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হয়। রাষ্ট্রীয় শোক পালন উপলক্ষে দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
এ দিন মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তার আত্মার মাগফেরাতের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

এর আগে ২১ ডিসেম্বর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রিয় প্রাঙ্গণ সুপ্রিম কোর্ট থেকে থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফকে শেষ বিদায় জানায় তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষীগণ। এছাড়াও আরো দু’দফা তার জানাজা হয়। তার সন্তান বিদেশ থেকে আসার পর ২৩ ডিসেম্বর তাকে দাফন করা হয়।

গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসান আরিফ। পরে তাকে ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। এ এফ হাসান আরিফ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিম বাংলার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

এ এফ হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এর আগে। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, গ্রামীণফোন বাংলাদেশ। তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ, নির্মাণ সালিস, বাণিজ্যিক সালিস, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, পাবলিক আস্বাদন, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সেরও উপদেষ্টা ছিলেন।

এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।