শিরোনাম
নেত্রকোনা, ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত কৃষি প্রধান নেত্রকোনা জেলায় এক সময় বাঁশ-বেতের কারিগরদের কদর ছিল বেশ। তবে তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার বর্তমানে আগের সেই কদর আর নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন শিল্পটির সাথে জড়িত জেলার শত শত কারিগর। এরইমধ্যে অনেকেই পেশা বদল করেছেন। তবুও দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনও টিকে আছেন কেউ কেউ।
তাদের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শিল্পটি যেমন টিকে থাকবে, তেমনি নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে কারিগরদেরও।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় এ জেলায় বাঁশ-বেতের কারিগরদের বেশ কদর ছিল। বাড়িঘর তৈরি থেকে শুরু করে কৃষি কাজের নানা রকম উপকরণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ছিল বাঁশ ও বেতের কারিগরদের। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ আর আগের মতো আর সেই জৌলুস নেই বাঁশ-বেতের। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলসহ পাড়া-মহল্লায় সবখানেই গড়ে উঠছে ইট-পাথরের ঘরবাড়ি। তাই চাহিদা কমেছে বাঁশ-বেতের পণ্য ও কারিগরদেরও।
তবুও নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় বর্তমানে আড়াই হাজারের মতো মানুষ বাঁশ-বেত শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন। তবে আগের মতো কদর না থাকায় ভালো নেই তারা। পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন।
সম্প্রতি জেলার হাওর এলাকা মদন, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলা ঘুরে এরকম চিত্রই দেখা গেছে।
কেন্দুয়া পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় বসে ৬-৭ বছর যাবত বাঁশ-বেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন শহীদ মিয়া, কালাম মিয়া ও বাবুল মিয়া নামে ৭-৮ জন বাঁশ-বেতের কারিগর। তারা চুক্তিতে মানুষের ঘরের বাঁশ-বেতের বিভিন্ন কাজ করে দেন।
কারিগর কালাম মিয়া বলেন, সবখানে এখন ইট, রড, সিমেন্টের বিল্ডিং ঘরবাড়ি তৈরি করছে লোকজন। তাই আমাদের কাজের তেমন একটা চাহিদা নাই। তবুও আমরা বেশ কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে এখানে খোলা জায়গায় বসে মানুষের বাঁশ-বেতের কাজের অর্ডার নিই। বাজারে বাঁশ ও রঙসহ সব উপকরণের দাম অনেক বেশি। তাই এ কাজ করে আমাদের খুব একটা লাভ হয় না। কোনো রকমে সংসার চলে।
কারিগর শহীদ মিয়া বলেন, এ কাজের জন্য পুঁজির দরকার। কিন্তু আমাদের তা নেই। ধারদেনা করে অনেক কষ্টে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তাই সুদমুক্ত ঋণ বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো।
স্থানীয় লোকসংস্কৃতি গবেষক শাহ্ মোহাম্মদ হারেছ উদ্দিন বলেন, এক সময় গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বিশাল বাঁশঝাড় ছিল। হাওরাঞ্চলের কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে বাঁশ-বেতের নানা রকম পণ্যের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। আর বাঁশ-বেত শিল্পকে ঘিরে শত শত মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো। কিন্তু বর্তমানে বাঁশ-বেত শিল্প বিলুপ্তপ্রায়। তাই আগের মতো কদর না থাকায় এই শিল্পের সাথে জড়িত লোকজনের অনেকেই পেশা বদল করেছেন। আর যারা এখনও আছেন তারা চরম কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় বাঁশ-বেত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং তার সাথে জড়িতদের জীবনমানের উন্নয়নে সরকারি ঋণ সহায়তাসহ সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এ শিল্প এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে শিল্পটির সাথে সংশ্লিষ্টদের।
জেলার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, এ উপজেলার অনেক মানুষ এখনও বাঁশ-বেত শিল্পের সাথে জড়িত। এ শিল্পকে বাণিজ্যিকীকরণের সুযোগ থাকলে আমরা তা করার চেষ্টা করব এবং শিল্পটির সাথে জড়িতদের খোঁজ নিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক শিরিন ইসলাম বলেন, জেলায় মোট আড়াই হাজারের মতো বাঁশ-বেতের কারিগর রয়েছেন। পূর্বে আমরা বাঁশ-বেত শিল্পের সাথে জড়িত কিছু লোকজনকে ঋণ প্রদান করেছি। তবে বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।