বাসস
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৭

লক্ষ্মীপুরে অতিথি পাখির বিচরণে মুখরিত জনেশ্বর দিঘি 

আব্বাছ হোসেন 

লক্ষ্মীপুর, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : এ শীতের মধ্যে দুর্লভ পরিযায়ী পাখির বিচরণে মুখরিত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের জনেশ্বর  দিঘি। দিনভর পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এলাকা।

পাখি দেখতে কার না ভালো লাগে। তাই পাখির রক্ষায় কাজ করছে স্থানীয়রা। গত ১২ বছর ধরে শীতের শুরুতে ভোরে পাখিগুলো অবস্থান নেয়  দিঘিতে। আর সন্ধ্যায় উড়াল দিয়ে চলে যায় অন্যত্রে। তবে শীতের পর আর পাখিগুলো দেখা যায় না। তবে স্থানীয়দের দাবি আর কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে তাদের রক্ষায় কাজ করছে  স্থানীয়রা। পাখি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পাখি প্রেমী দর্শনাথীদের ভিড় থাকে দিঘীর আশপাশ। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, এ  দুর্গম এলাকায় মনোরম পরিবেশে এভাবে পাখির বিচরণ থাকবে তা চিন্তাই করা যায় না। তাই পাখি সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় কিনা, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের জনেশ্বর  দিঘি। আর এ জনেশ্বর দিঘিতে এখন বিচরণ করছে অগণিত পরিযায়ী পাখি। এর কোনোটা হাজার মাইল দূর থেকে এসে মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।  দিঘিরপাড় আশ-পাশে এখন পরিযায়ী পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শীতের শুরুতেই  দিঘিতে পরিযায়ী পাখির দল বেঁধে ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর ডুব সাঁতারের সুন্দর মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ মাঝি, কৃষাণ-কৃষাণী ও স্থানীয়রা। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পিছিয়ে নেই দর্শনার্থী। প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে দিঘি তার আশপাশ। এবারও পাখি আসছে। তবে বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা যায়। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি অনুকূলে থাকায়  দিঘিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো। নদীতে শামুক, জলজ পোকামাকড় তাদের খাদ্য হলেও  দিঘিতে তা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও ইউসুফ হোসেন বলেন, গত ১২ বছর ধরে এ দিঘীতে ভোরবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে। আর সন্ধ্যায় চলে যায়। তবে পাখিগুলো যেন কেউ শিকার করতে না পারে, সেজন্য স্থানীয়রা পাহারার কাজও করছেন। অনেক সুন্দর লাগছে পাখিগুলোকে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন পাখি দেখতে।  দিঘিতে পাখিগুলো বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস, ছোট কান প্যাঁচা, লম্বা পা তিসাবাজ, জিরিয়া, টিটি, মনকান্ড, চখাচখিসহ কয়েক প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে দিঘিতে। তাই  দিঘিকে যেন পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা যায় এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

পাখিপ্রেমী মো. ইছমাইল হোসেন ও সফিকুল ইসলাম বলেন,আগে ভোর হতেই পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙতো। কিন্তু নদী, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। পাখির বাসযোগ্য স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের জন্য আমাদের নদীমাতৃক এ দেশের সৌন্দর্য যেমন মন কাড়ে, তেমনি কষ্টও লাগে যখন দেখি শিকারির হাতে বন্দী পাখি। তাই দিঘীতে নিরাপদ ভেবে পাখিরা আশ্রয় নেয়। পাখির যেন কেউি শিকার করতে না পারে, সেজন্য প্রতিনিয়ত স্থানীয়রা কাজ করে যাচ্ছে। আর কেউ পাখির শিকার বা ক্ষতি করছেনা।

মো. রেজাউল করিম নামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিঘীতে কমবেশি পরিযায়ী পাখি আসে। প্রতি বছরের মতো এবারও আসছে। তবে এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। দিঘীর পরিবেশ-প্রকৃতি পাখিদের অনুকূলে থাকায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো। তাই সংরক্ষণ ও রক্ষায় দলবদ্ধভাবে স্থানীয়রা কাজ করে যাচ্ছে। 

জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, দিঘীতে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটেছে। এসব অতিথি পাখি যেন কেউই মারতে না পারে সেজন্য প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে । প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। পাখির বাসযোগ্য স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ দিঘীতে পাখির বিচরণে সত্যি মুগ্ধ হই। এভাবে পাখির বিচরণ থাকবে তা চিন্তাই করা যায় না। তাই পাখি সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় কিনা, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।