বাসস
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৯

রংপুরে  শিশু  ও বয়স্করা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে

রংপুর, ৫ জানুয়ারি ,২০২৫( বাসস) : জেলায় ঠান্ডাজনিত কারনে বেড়েছে নানা রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে   শিশু ও বয়স্ক রোগীর বেশি আক্রান্ত  হচ্ছে। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। রোগীদের বেশিরভাগই শিশুই ডায়রিয়া আক্রান্ত। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি বয়স্করা এ্যাজমা ও হাপানিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ দিকে রোববার সকাল ৬ টায় রংপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন বাবা-মায়েরা। সকাল হলেই হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩য় তলার ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে দেড় শতাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। যাদের মধ্যে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে কোল্ড ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি।

মেডিকেলের বহির্বিভাগে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে আসছেন হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখাতে।

তিন বছরের সন্তান কোলে নিয়ে হাসপাতালে বেডে বসে আছেন মা রোকেয়া বেগম। তিনি জানান, হঠাৎ কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা। কমার কোন নামগন্ধ নেই। আরও অবস্থার অবনতির দিকে যাচ্ছে, যার কারনে মেডিকেলে আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে এসে, ডাক্তারের পরামর্শে মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছে। দুইদিন ধরে চিকিৎসার ফলে একটু ভালো হওয়ার দিকে যাচ্ছে। একই কথা বলেন শাহীম নামের এক অভিভাবক। তার সন্তানেরও ডায়রিয়া।

নিউমোনিয়া আক্রান্ত এক শিশুর অভিভাবক  রহিম জানান, তার সন্তান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এখন ভালো অবস্থায়। দুইদিন আগে খুবই খারাপ অবস্থা ছিলো। স্যালাইন হাতে সন্তানের বাবা আর কোলে সন্তান নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বেডের দিকে। সম্পর্কের দাদী জানান, ৬ মাস বয়সী শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, এখন বেডে নিচ্ছেন। চিকিৎসা শুরু হয়নি।

অন্যদিকে, মেডিকেলের পাশাপাশি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। এসব রোগীর মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্তরাই রয়েছেন। গত কয়েকদিনে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত। বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই চিত্র। সেখানেও ভর্তি রোগীর মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্তই বেশি।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, শীতের কারনে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বেশিরভাগই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় শীতজনিত রোগের কারনে গত তিনদিনে প্রায় ২৫০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, জন্ডিস, সর্দি-জ্বরসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্করা আসছেন। শীতজনিত রোগীর চিকিৎসা দিতে বহির্বিভাগে নেবুলাইজার মেশিনসহ স্যালাইন ও জিংক রাখা হয়েছে। জটিল মনে হলে মেডিকেলে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ শাকির মুবাশ্বির বাসস কে বলেন, এখন শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে বেশিরভাগ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। খুবই জটিল মনে হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্টার ডাঃ আ ন ম তানভীর চৌধুরী বাসস কে বলেন, শিশু রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, তবে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুরা সবসময় চিকিৎসা নিলেও এবারে কোল্ড ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা বেশি ভর্তি হচ্ছে। এজন্য আমাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। 

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বাসস কে জানান, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে, বেশি অসুস্থ মনে হলে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।