বাসস
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:০০

রংপুরে ভরা মৌসুমে বাড়ছে চালের দাম

 

\ রেজাউল করিম মানিক \

রংপুর ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ধানের ভরা মৌসুমেও রংপুর অঞ্চলে চালের দাম বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ৫০ কেজির বস্তায় ৭০ থেকে ১২০ এবং

কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে চালের দাম। 

খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে এবং আমদানি করা চাল দেশেও পৌঁছেছে। কিন্তু আমদানিকারকরা সে চাল বাজারে বিক্রি না করে গুদামজাত করে রাখায় ভরা মৌসুমে বাড়ছে চালের দাম। চালের দাম বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। 

রংপুরের মাহিগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বর্তমানে ৬৭ থেকে ৭০ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। নাজিরশাইল চালের দামও কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়ে ৭৫-৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ও ব্রি-২৯ জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়, যা খুচরা বাজারে ৫২-৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর চিকন চালের মধ্যে মাঝারি মানের দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। আর ভালোমানের চিকন চাল নাজিরশাইল ও জিরাশাইল প্রতি কেজি ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলার আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মো.জহিরুল হক বাসস’কে জানান, নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে রংপুরে প্রতি বছর অর্ধলাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকে। এর পরও এই অঞ্চলে চালের দাম কমছে না। এখন আমনের ভরা মৌসুমে রংপুরে চালের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাতেগোনা কিছু অটো রাইস মিল ও মজুতদার সিন্ডিকেট করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এছাড়া যারা ভারতসহ অন্য দেশ থেকে চাল আমদানি করেছেন তারা এগুলো গুদামজাত করে রেখেছেন। আমদানিকারক ও অটো রাইস মিল সিন্ডিকেটের কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ।

সম্প্রতি ভারত থেকে আমদানিকারকরা চাল আমদানি করে বেশি দাম পাওয়ার আশায় গুদামজাত করে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন নগরীর মাহিগঞ্জের চালের আড়তদার ফারুক হোসেন। বাসস’র সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ছোট ছোট হাসকিং মিলগুলো এখন আর চলে না। বড় অটো রাইস মিল মালিকরা কম দামে ধান কিনে মজুত করে নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া ধনী কৃষক ধান মাড়াই করে মজুত করে রেখে দিয়েছেন। তারা বাজারে ধান বিক্রি করছেন না। ফলে চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, রংপুরের অটো রাইস মিল মালিকরা ইচ্ছেমতো মজুতের মাধ্যমে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন। অটো রাইস মিলগুলো লাখ লাখ মণ ধানের মজুত করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অটো রাইস মিলগুলো দায়ী। অটো রাইস মিল মালিকরা আগে থেকে ধানের মজুত গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল-এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বাসস’কে বলেন, যেসব আড়তদার অবৈধভাবে চালের মজুদ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষগুলোর কষ্টে বেড়ে গেছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।