শিরোনাম
রংপুর, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : রংপুর কৃষি অঞ্চলের সর্বত্রই স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের ফলে অধিকাংশ জাতের শীতকালীন সবজির দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
চলতি রবি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার কৃষকরা শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)-এর কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে অতিবৃষ্টি এবং আকস্মিক বন্যায় শাক সবজির উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা সরবরাহ চেইনকে প্রভাবিত করে।
ডিএই’র রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘কয়েক মাস আগে খরায় ও পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর মাসে ভারী বৃষ্টি এবং আকস্মিক বন্যায় নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত ও সাপ্লাই চেইন প্রভাবিত হওয়ায় শাক সবজির মূল্যবৃদ্ধি পায়।’
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে অন্তবর্তী সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রণোদনা বিতরণসহ কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ায় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়ে সব ধরনের শাক সবজির দাম কমেছে। একইসঙ্গে ডিএইর মাধ্যমে সরকার রবি মৌসুম রংপুরের কৃষি অঞ্চলের পাঁচটি জেলার সবকটিতেই ৩৯ হাজার ৫৬২ হেক্টর জমি শীতকালীন সবজি চাষের আওতায় এনে ১০ লাখ চার হাজার ৮৭২ টন বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি উৎপাদনের একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে কৃষকরা ইতিমধ্যে ৩৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমি শীতকালীন সবজি চাষের আওতায় এনেছেন যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এই কৃষি অঞ্চলে সবজি চাষের জন্য বীজ বপন আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে।’
এদিকে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি তোলার কাজ চলছে। চমৎকার ফলনের হার এবং স্থানীয় বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকায় চাষের বর্তমানে এই অঞ্চলে সব শাক সবজির দাম অর্ধেক বা তারও বেশি কমেছে।
শীতকালীন সবজির বীজ বপন প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে রংপুর অঞ্চলে যেখানে কৃষক এবং গ্রামীণ নারীসহ সাধারণ মানুষ তাদের কাছাকাছি পরিত্যক্ত ও পতিত জমি এবং বসতভিটাতেও সবজি চাষ করছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট, সদর উপজেলা পালিচড়া ও রংপুর সিটি মার্কেটের পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীরা জানান, সব্জির উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে প্রতিদিন সবজির সরবরাহ আগের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে।
রংপুর সিটি মার্কেটে পাইকারি বাজারের বীথি বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, স্থানীয় বাজারে শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহের ফলে এখন দাম অর্ধেক বা তারও বেশি কমেছে যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে।
রংপুর সিটি মার্কেট বাজারে খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. হাফিজুর রহমান, পালিচড়া বাজারের মো. শাহিনুর ইসলাম বাজার ও জায়গীরহাট বাজারে রাশেদুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় শীতের সবজির দাম স্থানীয় বাজারে কমার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
তারা জানান, এসব বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৩৫-৪০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ১৫-৪০ টাকা, প্রতি কেজি শসা ৪০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁপে ৩৫ টাকা, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ১৫ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি রসুন ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, প্রতি কেজি করলা ৬০ টাকা, ফুলকপি ১০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ধনেপাতা ২০ টাকা, লাউ প্রতি পিছ ৩০ টাকা, প্রতি কেজি শিম ২৫ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা আর প্রতি কেজি টমেটো ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রংপুরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক মঈন উদ্দিন, বেলাল মিয়া, রবিউল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী ও আশরাফুল আলম জানান, আগাম জাতের শীতকালীন সবজি তুলে চাষাবাদ করার পর সেগুলো এখন বাজারে বিক্রি করে তারা ভালো লাভ করছেন। আগাম জাতের শীতকালীন সবজি তোলার পর তারা এখন একই জমিতে আবার শীতকালীন সবজির চাষ অব্যাহত রেখেছেন।