শিরোনাম
লালমনিরহাট, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার এক শিক্ষক দম্পতি কমলা চাষে সাড়া ফেলেছেন জেলা জুড়ে। শীতের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে নজরকাড়া ছোট বড়ো হলুদ রঙের, মিষ্টি কমলা। দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতি সেজেছে হলুদের সাজে। মিষ্টি ফলের মৌ মৌ গন্ধ, আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে তোলে। এ দৃশ্য দেখে দুচোখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়ে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার এক শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে।শিক্ষকতার পাশাপাশি কমলা চাষের সফলতায় গোটা জেলায় পরিচিতি লাভ করেছে তারা।
জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামের খলিলুর রহমান ও ফাতেমা খাতুন মজুমদার শিক্ষক দম্পতি সমতল ভূমিতে চায়না, নাগপুরি ও দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করে বেশ সফল হয়েছেন। বেশির ভাগ কমলা পেকে হলুদ হয়ে গেছে। আবার বেশ কিছু রয়েছে সবুজ রঙের। চায়না কমলার আকার ছোট হলেও সুস্বাদু ও মিষ্টি। কমলা চাষে তাদের সফলতা জেলাজুড়ে পরিচিতি নিয়ে এসেছে।
খলিলুর রহমান উপজেলার মিলন বাজার মোজাম্মেল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মজুমদার পশ্চিম সারডুবি গ্রামের পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
জানা গেছে, ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের দিকে ওই শিক্ষক দম্পতি শুরু করেন বিভিন্ন গাছের নার্সারি। পড়ে ২০১১ সালে এক বিঘা জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলা চারা রোপণ করেন।
২০১৫ সালে ১৫২টি গাছে ব্যাপকহারে ফল আসা শুরু করে। কাঙ্খিত ফল উৎপাদনে তিনি প্রশংসিত হন ও স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর থেকে ওই শিক্ষক দম্পতির আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে বাড়ির আশপাশসহ প্রায় এক একর জমিতে কমলা গাছের বাগান তৈরি করেন। তিন বছর পর ২০২৪ সালের শেষের দিকে প্রতিটি গাছে আশানুরূপ ফল এসেছে। বর্তমানে কমলার রং হলুদ আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত বাজারে প্রায় লক্ষাধিক টাকার কমলা বিক্রি করেছেন তারা ।
খলিলুর রহমান বলেন, আমার স্ত্রী ফাতেমা মজুমদার ২০১১ সালে দার্জিলিং জাতের কমলা বাড়ির সামনে রোপণ করেন। এরপর আমাদের কমলার বাগানের ব্যাপক নাম ছড়িয়ে পড়ে। কমলা বাগান করার তিন বছর পর প্রচুর পরিমাণে কমলা ধরেছে।
আমাদের নিজ পেশার পাশাপাশি কমলা বাগানের ফলের নিজেদের ফলের চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে । ঠিক তেমনি আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছি।
ফাতেমা খাতুন মজুমদার বলেন, শখের বসে শিক্ষকতার পাশাপাশি কমলা চাষ করছি। ২০১১ সালে কমলা বাগান করার পর থেকে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেয়েছি। তাদের সহযোগিতায় কমলা বাগানে সফলতা এসেছে আমাদের।
ফল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের জেলায় কমলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মূলত আমাদের দেশে কমলা বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর এ সব কমলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে আমাদের প্রায় ফলের দামের সমান ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ হয়ে যায়। অন্যদিকে আমাদের দেশে উৎপাদনকৃত ফলের তেমন কোন ভ্যাট ট্যাক্স লাগে না। দেশি ফলগুলো ১০০শ ৫০ টাকা বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি কেজি দরেও ভালোভাবে বিক্রি করতে পারি। তাতে লাভের সম্ভাবনা ভালো থাকে।
ওই এলাকার হোসেন মিয়া বলেন, আমাদের জেলায় কমলা চাষ হচ্ছে এটা অবাক করা বিষয়। বাগানের প্রতিটি গাছে কমলা ধরেছে।
আর এ বাগান দেখার জন্য প্রতিদিন উপচে পড়া ভিড় জমছে মানুষের। তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকার কমলা বাগান আমাদেরকে গর্বিত করেছে। এতো সুন্দর একটি কমলা বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এখন নিজেরাই বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, কমলা বাগানটি আমরা পরিদর্শন করেছি। বাগানে প্রচুর পরিমাণে কমলার ফলন হয়েছে। আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছি। আশা করি তাদের সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য চাষীদেরও কমলা চাষে আগ্রহ বাড়বে।